আজকের পত্রিকাআপনি দেখছেন ২৭-০২-২০২০ তারিখে পত্রিকা

কুয়াশা ঠান্ডায় ব্যাহত আগাম বাঙ্গি চাষ

ক্ষতির মুখে পাঁচ শতাধিক কৃষক

বিনয় জোয়ারদার, রাজৈর
| খবর

অসময়ে বৃষ্টি, কুয়াশা ও শীতের কারণে আগাম বাঙ্গি চাষে লোকসানের আশঙ্কায় মাদারীপুরের পাঁচ শতাধিক কৃষকের কপালে চিন্তার ভাঁজ পড়েছে। অন্য বছর এ সময়ে বাজারে রাজৈরের আগাম বাঙ্গি আসতে শুরু করলেও অসময়ে বৃষ্টির কারণে বাঙ্গি চাষ ব্যাহত হওয়ায় এবং শীত ও কুয়াশার কারণে বাঙ্গি খেতে রোগবালাই ও ভাইরাসের আক্রমণ দেখা দেওয়ায় আগাম বাঙ্গি চাষিদের মধ্যে দুশ্চিন্তা দেখা দিয়েছে। কৃষি বিভাগের প্রয়োজনীয় পরামর্শ মোতাবেক কীটনাশক ছিটিয়েও কোনো কূলকিনারা হচ্ছে না।
জানা গেছে, মাদারীপুর জেলার চার উপজেলায় এ বছর ১৫০ হেক্টর জমিতে বাঙ্গি চাষাবাদ করা হয়েছে। চাষাবাদকৃত ১৫০ হেক্টর জমির মধ্যে রাজৈরে ৭৫, মাদারীপুর সদরে ৭, কালকিনিতে ৩ এবং শিবচর উপজেলায় ৬৫ হেক্টর জমিতে বাঙ্গি চাষাবাদ করা হয়েছে। রাজৈর উপজেলার আবাদকৃত ৭৫ হেক্টর জমির মধ্যে উপজেলার বাজিতপুর ইউনিয়নের সুতারকান্দি ও গঙ্গাবদ্দী গ্রামেই আবাদ হয়েছে ৬০ হেক্টর জমিতে, যা আগাম বাঙ্গি হিসেবে পরিচিত। বিগত কয়েক বছরের ভয়াবহ বন্যায় রাজৈর উপজেলার বাজিতপুর ইউনিয়নের কয়েকশ’ হেক্টর আবাদি জমিতে বালুর স্তর পড়ায় কৃষকের জীবনে নেমে আসে ভয়াবহ বিপর্যয়। অনাবাদি হয়ে পড়ে শত শত হেক্টর জমি। বালু অপসারণ করে কৃষকের ভাগ্যের চাকা বদলে দিতে শুরু করে আগাম বাঙ্গি চাষ।
এ ইউনিয়নের সুতারকান্দি, গঙ্গাবদ্দী ও কোদালিয়া গ্রামের দুই শতাধিকসহ মাদারীপুরের পাঁচ শতাধিক আগাম বাঙ্গি চাষি ব্যাপক মুনাফা অর্জনের লক্ষ্যে এখন ব্যস্ত সময় পার করছেন বাঙ্গি চাষ নিয়ে। বাঙ্গি চাষ করে সবারই অভাব দূর হয়েছে। নভেম্বর মাসের প্রথম সপ্তাহ থেকে শুরু করে পুরো মাসের মধ্যে আগাম বাঙ্গি চাষাবাদের কাজ সম্পন্ন করা হয়। ফেব্রুয়ারি মাসের শেষ দিকে বাঙ্গি ফসল উঠতে শুরু করে। উত্তোলনের কাজ চলে এপ্রিলের দ্বিতীয় সপ্তাহ পর্যন্ত। এখানকার বাঙ্গির ফলন ও বাজারে এর ব্যাপক চাহিদা থাকায় প্রতি বছরই লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশি জমিতে আগাম বাঙ্গির চাষ করছেন চাষিরা। আর লাভবানও হয়েছেন এখানকার চাষিরা। কিন্তু প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে এ বছর আগাম বাঙ্গি চাষে মারাত্মক বিপর্যয় দেখা দেওয়ায় বাঙ্গি চাষিদের লোকসান গুনতে হবে বলে আশঙ্কা রয়েছে।
অসময়ে বৃষ্টি, কুয়াশা ও শীতের কারণে আগাম বাঙ্গি চাষে লোকসানের আশঙ্কায় মাদারীপুরের পাঁচ শতাধিক কৃষকের কপালে চিন্তার ভাঁজ পড়েছে। তবে কৃষি বিভাগ আশা করছে, তাপমাত্রা বেড়ে যাওয়ায় এবং গাছে প্রচুর ফুল আসায় কিছু দিনের মধ্যেই বাজারে ফল আসতে শুরু করবে। বাজিতপুরের সুতারকান্দি গ্রামের আবদুল আলিম ফকির জানান, তিনি গেল বছর ৫২ শতকের ৮ বিঘা জমিতে আগাম বাঙ্গি চাষ করে প্রায় ৫ লাখ টাকা লাভ করেছিলেন। এ বছরও তিনি ৮ বিঘা জমিতে আগাম বাঙ্গির চাষ করেছেন। কিন্তু অসময়ে বৃষ্টি, কুয়াশা এবং শীতের কারণে বাঙ্গি গাছে রোগবালাই ও ভাইরাস দেখা দিয়েছে। কৃষি বিভাগের পরামর্শ মোতাবেক কীটনাশক ব্যবহার করেও কোনো ফল পাচ্ছেন না। বাঙ্গি চাষে তিনি এ বছর লোকসানের আশঙ্কা করছেন। এ এলাকার বাঙ্গি চাষি কালু ফকির জানান, অন্য বছর এ সময় বাঙ্গি ফসল পুরোদমে ওঠা শুরু করে এবং তারা প্রতিদিন তারা ঢাকা-বরিশাল মহাসড়কের পাশের সুতারকান্দি চাতাল এলাকায় বাঙ্গির হাটে বেচাকেনা করতেন। এছাড়া দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে ব্যবসায়ীরা এখান থেকে বাঙ্গি কিনে নিয়ে দেশের বিভিন্ন স্থানে বিক্রি করতেন। এ বছর খেতে ভাইরাস লাগায় গাছে কোনো ফল আসেনি। এ কারণে ব্যবসায়ীরা বাঙ্গি কিনতে এসে না পেয়ে ফিরে যাচ্ছেন।
রাজৈর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা ফরহাদুল মিরাজ জানান, বাঙ্গি একটি স্বল্পকালীন ফসল। উচ্চমূল্যের ফসল হিসেবে বাঙ্গি চাষ রাজৈর উপজেলায় বেশ জনপ্রিয়তা লাভ করেছে। প্রতি বছরের এ সময়ে বাজারে রাজৈরের বাঙ্গি চলে আসে। এ বছর বৃষ্টির কারণে এখনও বাঙ্গি আসেনি। তবে খুব অল্প সময়ের মধ্যে রাজৈরের এ বাঙ্গি বাজারে আসবে। বাঙ্গি চাষে এবার কুয়াশা এবং বৃষ্টির কারণে আমরা দেখেছি, কিছু কিছু ক্ষেত্রে ছত্রাক ও ভাইরাসজনিত কিছু রোগের প্রকোপ দেখা গেছে। মাঠ ঘুরে দেখা গেল, যে দুয়েকটি গাছে ভাইরাসের আক্রমণ হয়েছে। আমরা কৃষি বিভাগ সার্বক্ষণিক কৃষকের পাশে থেকে তাদের পরামর্শ দিয়েছি এবং কীটনাশক স্প্রে করার পরামর্শ দিয়েছি। মাদারীপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক কৃষিবিদ জিএমএ গফুর জানান, রাজৈর উপজেলায় যে বাঙ্গি চাষ করা হয়েছে, তা সবই আগাম বাঙ্গি। আগাম বাঙ্গি চাষের জন্য রাজৈর উপজেলার বাজিতপুর ইউনিয়ন বৃহত্তর ফরিদপুর জেলার মধ্যে যথেষ্ট সুনাম অর্জন করেছে। আগাম বাঙ্গি একটি লাভজনক অর্থকরী ফসল হওয়ায় আবাদি জমি ও কৃষকের সংখ্যা ক্রমেই বৃদ্ধি পাচ্ছে। এ বিষয়ে কৃষককে সবরকম সুযোগ-সুবিধা প্রদান করা হচ্ছে।