ঘড়ির কাঁটায় তখন সকাল ১০টা। তখনও সূর্যের আলো তেমন একটা জ্বল জ্বল করেনি। কুয়াশার চাদরে ঢাকা আকাশ। আঁকাবাঁকা মেঠোপথ ধরে চলতেই দুই পাশে চোখে পড়ে বিলে কোথাও পানি, কোথাও ধুধু প্রান্তর। কৃষি শ্রমিকরা রোপা ধানের চারা লাগাচ্ছেন। কোথাও আবার চাষাবাদের জন্য মাটি খননের কাজ চলছে। দুই পাশে বিলের মাঝখানে সাদা বকের মেলা। মনে হচ্ছে যেন বকের অভয়াশ্রম এটি। প্রতিদিন সকাল হতেই বিলে খাবারের সন্ধানে ছুটে আসে হাজার হাজার বক। যত দূর দৃষ্টি যায়, তত দূর দেখা যায় ঝাঁকে ঝাঁকে সাদা বক। আবার কখনও চোখের নিমিষে ডানা মেলে উড়ে যাচ্ছে দৃষ্টিসীমার বাইরে। এ যেন এক অপূর্ব দৃশ্য! চট্টগ্রামের শস্যভা-ারখ্যাত রাঙ্গুনিয়া উপজেলার চন্দ্রঘোনা-কদমতলী ইউনিয়নের আধুরপাড়া অংশে গুমাই বিলে গেলে এ দৃশ্য দেখা যায়।
কাছে যেতেই উড়ে যাচ্ছে ঝাঁকে ঝাঁকে বক। এমন নয়নাভিরাম দৃশ্য না দেখলে বোঝা যাবে না এ সৌন্দর্য। প্রতি বছর ইরি এবং আমন ধানের মৌসুমে চাষাবাদের জন্য বিলে পানি সেচ দেওয়ার স্থানে খাবারের জন্য বিচরণ করতে আসে এসব বক। স্থানীয়দের মতে, গেল বছরও এত বক পাখির দেখা মেলেনি। কেউ কেউ পাখি শিকারের চেষ্টা করলেও স্থানীয়দের প্রতিরোধে তাদের সেই চেষ্টা ব্যর্থ হচ্ছে। চন্দ্রঘোনার কদমতলী গ্রামের প্রবীণ ব্যক্তি আবদুর রহমান বলেন, গুমাই বিলটি একসময় ঝিল ছিল। এ বিলজুড়ে ছিল মাছ আর মাছ। আর নানা প্রজাতির পাখপাখালিতে ভরপুর। এখন এগুলো শুধুই স্মৃতি। চন্দ্রঘোনার আধুরপাড়া গ্রামের বেলাল উদ্দিন বলেন, চাষাবাদের জন্য বিলে পানি দেওয়ার পর সাদা বক পোকামাকড় খেতে ছুটে আসে। স্থানীয় ভাষায় এসব বক পাখিকে ধলা বোঘা বলে।
উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা মুহাম্মদ মুস্তফা কামাল বলেন, বাংলাদেশে ১৮ প্রজাতির বক রয়েছে। এসব পাখি প্রাকৃতিক ভারসাম্য রক্ষায় ভূমিকা রাখছে। মাছ ছাড়াও জলজ পোকামাকড় খেয়ে ফসলের উপকার করে থাকে বক। ওদের খাদ্যাভাব ও নিরাপত্তার অভাব আছে। তিনি বলেন, প্রকৃতিকে রক্ষা করতে এসব পাখিকে রক্ষা করতে হবে। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. মাসুদুর রহমান বলেন, বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ আইনে অবৈধভাবে পাখি শিকার করলে সাজার বিধান রয়েছে। যারা আইন অমান্য করে পাখি শিকার করবে, তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।