প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে বুধবার প্রধান অতিথি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কৃতী শিক্ষার্থীদের হাতে ‘প্রধানমন্ত্রী স্বর্ণপদক-২০১৮’ তুলে দেন- বাসস
মাধ্যমিক স্তরে নবম শ্রেণিতে ওঠা শিক্ষার্থীদের বিজ্ঞান, মানবিক আর বাণিজ্য বিভাগে ভাগ করে ফেলার আর যুক্তি দেখছেন না প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেছেন, শিক্ষার মাধ্যমিক স্তরে এ বিভাগ থাকার কোনো দরকার নেই। বুধবার প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ে কৃতী শিক্ষার্থীদের মধ্যে ‘প্রধানমন্ত্রী স্বর্ণপদক’ বিতরণ অনুষ্ঠানে দেওয়া বক্তৃতায় তিনি একথা বলেন। সরকারপ্রধান বলেন, আমাদের ক্লাস নাইন থেকে কে কোন সাবজেক্টে যাবে, তা ভাগ করে দেওয়া হয়। আমাদের এখানে এক সময় করা হয়েছিল। এটা বোধহয় প্রেসিডেন্ট আইয়ুব খানের সময় ৬৩ সালে করা হয়। কেউ বিজ্ঞান পড়ল না দুই বছর, এজন্য সে এটায় ভর্তি হতে পারবে না, ওটায় ভর্তি হতে পারবে না। আমেরিকায় এটা নেই। পৃথিবীর অনেক দেশে এটা নেই। কাজেই এটা না থাকাই ভালো। আমার মনে হয়, এই ভাগটা থাকার কোনো দরকার নেই।
এসএসসি পর্যন্ত সব বিষয়ই শিক্ষার্থীদের পড়া প্রয়োজন মন্তব্য করে শেখ হাসিনা বলেন, সব সাবজেক্টই তারা পড়তে পারে। এসএসসির পরে গিয়ে যদি বিভক্তি হয় তবে সেটাই ভালো। তাহলে অন্তত তার মেধা বিকাশের একটা সুযোগ পায়। যুগের সঙ্গে তাল মিলিয়ে আমাদের চলতে হবে।
বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের এ আয়োজনে প্রধানমন্ত্রী সারা দেশের বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ের ১৭২ জন কৃতী শিক্ষার্থীকে ২০১৮ ‘প্রধানমন্ত্রী স্বর্ণপদক’ দেন।
প্রযুক্তিনির্ভর ও জ্ঞানভিত্তিক সমাজ গঠনের ওপর গুরুত্বারোপ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এখন তো সব সাবজেক্টই বিজ্ঞানভিত্তিক। বিজ্ঞানের বাইরে কিছু নাই। আমরা এখন চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের কথা বলছি। এখন থেকে আমাদের ছেলে-মেয়েদের দক্ষ জনশক্তি হিসেবে গড়ে তুলতে হবে। কারণ প্রযুক্তিভিত্তিক শিল্প গড়ে উঠছে, সেটা আরও বিকশিত হবে। এখানে আমাদের জনশক্তি লাগবেই।
বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিভিত্তিক শিক্ষার প্রসার হলে বাংলাদেশ ভবিষ্যতে অন্যান্য দেশকেও সহযোগিতা করতে পারবে বলেও মন্তব্য করেন তিনি। প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের দেশের মানুষকে যদি কারিগরি শিক্ষা থেকে শুরু করে সব ধরনের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি শিক্ষা যদি দিতে পারি, আমরা অন্যকে সাহায্য করতে পারব, অন্য দেশকে সহযোগিতা করতে পার। সেই অবস্থা আমরা তৈরি করতে পারব এবং আমাদের সেটাই করতে হবে। সেভাবে আমরা কাজ করতে চাই।
প্রত্যেক উপজেলায় কারিগরি শিক্ষা প্রসারের জন্য স্কুল-কলেজ নির্মাণের কাজ সরকার দ্রুত বাস্তবায়ন করছে বলে জানান প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, দক্ষ জনশক্তি গড়ে তোলার জন্য যে জিনিস দরকার, সেটা আমরা করে যাচ্ছি। এ ক্ষেত্রে একদিকে যেমন কর্মসংস্থান হবে, অন্যদিকে আমাদের জনগোষ্ঠী কখনও অবহেলিত থাকবে না, সবাই শিক্ষিত হবে। সেভাবেই আমরা তাদের গড়ে তুলছি।
কর্মক্ষেত্রে কাজ করার যার যে দক্ষতা আছে, সে সেভাবেই শিক্ষা গ্রহণ করতে পারবে। সে সুযোগটা সৃষ্টি করে দেওয়া প্রয়োজন বলে আমরা মনে করি।
চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের পথে ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে প্রস্তুত করতে তথ্যপ্রযুক্তির শিক্ষায় জোর দিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, তথ্যপ্রযুক্তির শিক্ষা আধুনিক জগতে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। হয়তো ভবিষ্যতে নতুন নতুন প্রযুক্তি আসবে। যখনই যেটা আসবে আমাদের দেশের ছেলে-মেয়েরা যেন সবকিছুর জন্য প্রস্তুত থাকতে পারে সেভাবে আমরা গড়ে তুলতে চাই। সমন্বিত শিক্ষা পদ্ধতিতে মাদ্রাসার শিক্ষার্থীরাও পিছিয়ে থাকবে না বলে জানান প্রধানমন্ত্রী।
আমরা কাউকে অবহেলা করতে চাই না। মাদ্রাসাতেও কিন্তু অনার্স কোর্স চালু হয়েছে। সেখানে প্রযুক্তি শিক্ষা রয়েছে। এমনকি আমাদের কওমি মাদ্রাসাগুলোকে স্বীকৃতি দিয়েছি, দাওরায়ে হাদিস পর্যায়ে আমরা মাস্টার্স মান দিয়েছি। এ কারণে তাদেরও আমরা সমন্বিত শিক্ষার মধ্যে নিয়ে আসতে চাই, একই ডিসিপ্লিনে নিয়ে আসতে চাই।
তারা তাদের মতো পড়বে। সঙ্গে সঙ্গে আমাদের দৈনন্দিন যে শিক্ষার দরকার হয় কর্মক্ষেত্রে চাকরি পেতে, বা কাজ পেতে যে শিক্ষার দরকার হয়, সে শিক্ষা তারা গ্রহণ করবে। সেখানেও মেধাবী ছেলেপেলে আছে। তাদের কেন আমরা অবহেলা করব? তাদেরও নিয়ে এসেছি।
অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি, শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল, বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের চেয়ারম্যান অধ্যাপক কাজী শহীদুল্লাহ অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন। সূত্র : বিডিনিউজ