আজকের পত্রিকাআপনি দেখছেন ২৭-০২-২০২০ তারিখে পত্রিকা

তিন ধাপে প্রস্তুতি করোনা ভাইরাস ঠেকাতে

দেশে কারও শরীরে পাওয়া যায়নি

নিজস্ব প্রতিবেদক
| শেষ পাতা

একের পর এক দেশে করোনা ভাইরাস (কোভিড-১৯) রোগ ছড়িয়ে পড়ায় এ ভাইরাস প্রতিরোধে সতর্ক বাংলাদেশ। প্রাণঘাতী এ ভাইরাস এখনও বাংলাদেশে না ঢুকলেও তা প্রতিরোধে তিন ধাপের প্র্রস্তুতি নেওয়ার কথা জানিয়েছেন জাতীয় রোগতত্ত্ব, রোগনিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের (আইইডিসিআর) পরিচালক অধ্যাপক ডা. মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা। তিনি জানিয়েছেন, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়, স্বাস্থ্য অধিদপ্তর ও আইইডিসিআরের সমন্বয়ে এ প্র্রস্তুতির খসড়া তৈরি করা হয়েছে।
বুধবার করোনা ভাইরাস নিয়ে নিয়মিত সংবাদ সম্মেলনে আইইডিসিআরের পরিচালক অধ্যাপক ডা. মীরজাদী বলেন, বাংলাদেশে এবার অনেক আগে থেকেই করোনা ভাইরাসের পূর্ব প্র্রস্তুতি নিয়ে কাজ করছিলাম আমরা। যে প্র্রস্তুতি নিয়ে আমরা কাজ করছি এবং যদি রোগী পাওয়া যায় তখন কী করা হবে, সেসব প্র্রস্তুতির খসড়া আমরা তৈরি করেছি। সেটা চূড়ান্ত করার প্রক্রিয়া চলছে। তিন ধাপে পরিকল্পনার বিষয়ে অধ্যাপক ডা. ফ্লোরা বলেন, একটা হচ্ছে অ্যালার্ট লেভেলÑ যখন কোনো রোগী নেই, এখন সেই কর্মসূচি আমরা পালন করছি। যখন বিদেশ থেকে রোগী পাওয়া যাবে, অল্প সংখ্যায়, সেটা আরেকটা লেভেল। আর শেষটা হলো যদি অনেক রোগী হয়ে যায়, সেই লেভেল। তবে বাংলাদেশে এমন পরিস্থিতির সৃষ্টি হবে না বলে আশা করলেও প্রতিরোধের প্র্রস্তুতিতে কোনো ঘাটতি রাখা হচ্ছে না।
তিনি বলেন, সম্মিলিতভাবে আমরা যে কার্যক্রম নিচ্ছি, তাতে আশঙ্কা করি নাÑ এ রোগটা দ্রুত ছড়িয়ে পড়বে। করোনা ভাইরাস সংক্রমণ পরীক্ষার উপকরণের কোনো সমস্যা নেই বলে জানান তিনি। তিনি আরও বলেন, কীট পাইপলাইনে আছে, কীট আসতেই থাকবে। চীন, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা থেকে আসছে। আমরা নমুনা পরীক্ষার ক্ষেত্রে তো কাউকে ফিরিয়ে দিইনি এখনও। অধ্যাপক ডা. ফ্লোরা বলেন, যদি ১০০ বা ২০০ জন আক্রান্ত হন, সেক্ষেত্রে পরীক্ষার প্রয়োজন নেই বলে নির্দেশনা দিয়েছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। প্রাথমিক উপসর্গ দেখা দিলে ধরে নিতে হবে, করোনা ভাইরাসের রোগী তারা। সেই অনুযায়ী চিকিৎসা দিতে হবে। চিকিৎসার বিষয়ে তিনি বলেন, করোনার তো কোনো আলাদা চিকিৎসা নেই। কমন কোল্ডের চিকিৎসা দিতে হবে, এদের আইসোলেশনে রাখতে হবে যেহেতু রোগটা ছোঁয়াচে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার বরাত দিয়ে আইইডিসিআরের পরিচালক বলেন, করোনা ভাইরাসে আক্রান্তদের ৮০ শতাংশের বেশি মৃদু, ১৪ শতাংশের হাসপাতালে ভর্তির প্রয়োজন হয়েছে এবং ৬ শতাংশ জটিল অবস্থা নিয়ে আইসিইউ সাপোর্টে চিকিৎসায় রয়েছে। তিনি জানান, বাংলাদেশে গেল ২৪ ঘণ্টায় নতুন চারজনের নমুনা পরীক্ষাসহ মোট ৮৩ জনের নমুনা পরীক্ষা করা হলেও তাদের কারও মধ্যে করোনা ভাইরাসের জীবাণু পাওয়া যায়নি। আমরা প্রত্যেককেই হোম কোয়ারেন্টাইনে রেখে ১৪ দিনের নজরদারিতে রেখেছি, তাদের সঙ্গে যোগাযোগ রেখেছি। আর উহান থেকে যারা এসেছে, তাদের ১৪ দিনের বাইরেও আরও ১০ দিন নজরদারিতে রেখেছি কোনো লক্ষণ বা উপসর্গ দেখা যায় কি না, তা দেখার জন্য। সেই ১০ দিনও শেষ হয়েছে, কিন্তু তাদের কোনো উপসর্গ দেখা যায়নি। করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত সিঙ্গাপুরে পাঁচজন ও সংযুক্ত আরব আমিরাতে একজন বাংলাদেশির অবস্থা অপরিবর্তিত রয়েছে বলে জানান তিনি। বছরের শুরুতে চীনের উহানে নভেল করোনা ভাইরাস সংক্রমণের পর তা এরই মধ্যে ৩৯টি দেশ ও অঞ্চলে ছড়িয়েছে। এতে আক্রান্ত হয়েছে ৮০ হাজারের বেশি মানুষ, মারা গেছেন ২ হাজার ৭০০-এর বেশি মানুষ। আফগানিস্তান, ওমান, বাহরাইন ও ইরাকেও সংক্রমণ ঘটেছে বলে জানান ডা. মীরজাদী ফ্লোরা। তিনি বলেন, চীনের বাইরে সিঙ্গাপুর, দক্ষিণ কোরিয়া, ইরান ও ইতালিকে গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করে সেসব দেশে থাকা বাংলাদেশিদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখা হচ্ছে।