শহীদ সাংবাদিক সেলিনা পারভীন
সেলিনা পারভীন একটি আন্দোলন। একটি প্রতিবাদী চরিত্র। একাত্তরের ১৩ ডিসেম্বর আলবদর বাহিনীর লোকেরা তার সিদ্ধেশ্বরীর বাসা থেকে তাকে ধরে নিয়ে যায়। ১৪ ডিসেম্বর অন্য দেশ বরেণ্য বুদ্ধিজীবীদের সঙ্গে রায়ের বাজার বধ্যভূমিতে তাকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়। ১৮ ডিসেম্বর শহীদ সেলিনা পারভীনের দাফন হয় আজিমপুর নতুন গোরস্থানে।
৩১ মার্চ তার জন্মদিন। এ উপলক্ষে ‘বাংলাদেশ নারী সাংবাদিক কেন্দ্র’ আলোচনা সভা ও পদক প্রদাণ অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছে।
বাংলাদেশ নারী সাংবাদিক কেন্দ্রের সভাপতি নাসিমুন আরা হক মিনু জানান- আগামীকাল রোববার (৩১ মার্চ) বেলা ১১টায় জাতীয় প্রেসক্লাবের ৩য় তলায় এ আলোচনা সভা ও পদক প্রদাণ অনুষ্ঠান করা হবে।
সেলিনা পারভীন ১৯৩১ সালের ৩১ মার্চ নোয়াখালী জেলার ফেনীর রামগঞ্জের ছোট কল্যাণনগর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তার বাবার নাম মৌলভি আবিদুর রহমান এবং মায়ের নাম মোসাম্মৎ সাজেদা খাতুন। তার শৈশব ও কৈশোর কেটেছে ফেনী শহরে। ৯ ভাইবোনের মধ্যে তিনি ছিলেন তৃতীয়।
১৯৪৩ সালে সেলিনা পারভীনের বয়স যখন ১২, তখন সামাজিক ও পারিবারিক চাপে তার ইচ্ছার বিরুদ্ধে বিয়ে হয়। বিয়ের পর সেলিনা পারভীন ঠিক করলেন তিনি লেখাপড়া এবং সাহিত্য সাধনা করবেন। ১৯৫৬ সালে চলে আসেন ঢাকায়। ১৯৫৭ সালে মিটফোর্ড হাসপাতালে (বর্তমানে সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ) নার্সি ট্রেনিং গ্রহণ করেন। কিন্তু নার্সিং পেশাটাকে সমাজ সুনজরে দেখে না বলে পরে ছেড়ে দেন।
১৯৫৯ সালে চাকরি নেন রোকেয়া হলে। মেট্রনের চাকরি। ১৯৬০ সালে চাকরিটি ছেড়ে দেন এবং ফেনী চলে যান। ১৯৬০-৬১ সালে শিক্ষকতা করেন আজিমপুর বেবি হোমে।
১৯৬৬ সালে বেগম সম্পাদিকা নূরজাহান বেগমের ব্যক্তিগত সচিব হিসেবে কাজ শুরু করেন। প্রথমে বিভিন্ন ঠিকানা সংগ্রহ ও সংরক্ষণের কাজ করেন। পরে প্রেসের কাজের সহায়ক হন। প্রেসে প্রেসবস্নক তৈরি করতেন। বেগম পত্রিকায় তিনি ১৯৬৭ সালের মাঝামাঝি পর্যন্ত কাজ করেন।
১৯৬৭ সালের শেষের দিকে তিনি সাপ্তাহিক ‘ললনা’ পত্রিকায় কাজ করতেন। কাজের সঙ্গে সঙ্গে আরেক কাজ, পাশাপাশি গল্প, কবিতা, প্রবন্ধ লেখা চালালেন সমভাবে। লেখা তার ছাপা হয় আজাদ, ইত্তেফাক, দৈনিক পাকিস্তান, পূর্বদেশ ও বেগমে।
১৯৬৮ সালে প্রকাশিত হয় তার নিজস্ব পত্রিকা ‘শিলালিপি’। লেখা সংগ্রহ, বিজ্ঞাপন সংগ্রহের জন্য দিনের বেশিরভাগ সময় ব্যয় হতো তার। পত্রিকাটি প্রকাশ করেছিলেন তিনি প্রত্যয় নিয়ে। ‘শিলালিপি’ সেলিনা পারভীনের নিজের সন্তানের মতোই ছিন।
দেশের প্রায় সব বুদ্ধিজীবীদের লেখা নিয়ে প্রকাশিত ‘শিলালিপি’ সবারই নজর কাড়ে। স্বাধীনতার পক্ষের পত্রিকা ছিল ‘শিলালিপি’ আর এজন্য ১৯৭১ সালে শিলালিপি কালো তালিকাভুক্ত হয়। তার উপর নেমে আসে পাকিস্তানি বাহিনীর খড়গ।