একে একে শেষ হয়ে যাচ্ছে রহমত, মাগফিরাত আর নাজাতের দিনগুলো। অপার ফজিলতের এই দিনগুলোতে আমরা গুনাহগার বান্দারা যে যার আমল হিসাবে হিস্যা পেয়েছি মহান রবের দয়া ও অনুগ্রহের। আর কয়েকটি দিন বাকি। এর পর অফুরান নিয়ামতের ধারাবর্ষণ থেমে যাবে।
আল্লাহতায়ালা উম্মতে মোহাম্মদির মুক্তি লাভের জন্য এ মাসকে বিশেষ উসিলা করেছেন। এ মাসের একটি বড় আমল হলো তিলাওয়াতে কোরআন। আর পবিত্র কোরআনের তাৎপর্যপূর্ণ সুরাগুলোর মধ্যে ইয়াসিন উল্লেখযোগ্য।
সুরা ইয়াসিনের ফজিলত সম্পর্কে অসংখ্য হাদিস বর্ণিত হয়েছে। এক হাদিসে রাসুল (সা) বলেন- যে ব্যক্তি এই সুরা একবার পাঠ করবে, আল্লাহতায়ালা তাকে ১০ বার পবিত্র কোরআন খতম করার তাওফিক দান করবেন। অন্যত্র বর্ণিত হয়েছে- কোনো ব্যক্তি যদি রাতে আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের উদ্দেশ্যে সুরা ইয়াসিন তিলাওয়াত করে, আল্লাহতায়ালা তাকে ওই রাতেই মাফ করে দেন।
তিরমিজি শরিফের এক হাদিসে বর্ণিত- সুরা ইয়াসিন একবার পাঠ করলে ১০ বার কোরআন খতমের সওয়াব মিলে এবং তিলাওয়াতকারীর সব গুনাহ মাফ হয়। হাদিস শরিফে আরও উল্লেখ রয়েছে- কেউ রাতে সুরা ইয়াসিন তিলাওয়াত করলে সকালে নিষ্পাপ হয়ে জাগে এবং তার আগের গুনাহ মাফ হয়ে যায়। যে ব্যক্তি সুরা ইয়াসিন অধিক তিলাওয়াত করবে, হাশরের দিন এই সুরা আল্লাহর দরবারে তার জন্য সুপারিশ করবে। রাসুল (সা) আরও এরশাদ করেছেন- যে ব্যক্তি নিয়মিত সুরা ইয়াসিন পাঠ করবে, তার জন্য জান্নাতের আটটি দরজা খোলা থাকবে।
সুরা ইয়াসিন তিলাওয়াতে দুনিয়াবি অভাব-অনটনও দূর হয়। সংসারে বয়ে আনে অনাবিল সুখ, সবার মাঝে বিরাজ করে প্রশান্তি। হজরত আবদুল্লাহ ইবনে জুবায়ের (রা) থেকে বর্ণিত, যদি কোনো ব্যক্তি সুরা ইয়াসিন অভাব-অনটনের সময় পাঠ করে, তা হলে তার অভাব দূর হয়, সংসারে শান্তি আসে এবং রিজিকে বরকত লাভ হয়। (মাজহারি)।
সুবহানাল্লাহ! এই হলো মাত্র কয়েক পৃষ্ঠার একটি সুরা তিলওয়াতের বিনিময়। আল্লাহতায়ালা তার বান্দাকে স্বীয় কালাম পাঠের জন্য, তা অনুধাবনের জন্য খুব করে উৎসাহিত করেছেন। কিন্তু আমরা সেদিকে ভ্রুক্ষেপও করি না। কত অনর্থক কাজে সকাল-সন্ধ্যা কাটিয়ে দিই। খেলাধুলা-বিনোদনের জন্য সময় নির্ধারণ করি। দীর্ঘ বেলা আড্ডার টেবিলে চলে যায়। দুনিয়ার সবই ঠিক আছে আমাদের, শুধু পরকালীন চিন্তা নেই। মৃত্যুর চিন্তা নেই। অথচ প্রত্যেকের মৃত্যু তার ঘাড়ের ওপর শ্বাস ফেলছে! হে মুমিন-মুসলমান, সজাগ হোন। খুলে বসুন প্রভুর কিতাব। তিনি স্র্রষ্টা হয়ে আপনাকে কী বলছেন, তা অনুধাবনের চেষ্টা করুন।
আরবি ভাষা জানেন না, বোঝেন না, শুদ্ধভাবে তিলাওয়াত করতে পারেন না- এগুলো কোনো অজুহাত নয়। আপনি নিজ প্রয়োজনে, নিজের অর্থনৈতিক উন্নতির জন্য অনেক কিছু শিক্ষা করেছেন, করছেন। আর আসল জীবন, অনন্তকালের সেই জীবন- তার জন্য কিছু কি করার নেই!
রোজাসংক্রান্ত মাসআলা
ছুটে যাওয়া রোজার কাজা সম্ভব না হলে মৃত্যুর আগে ফিদয়া দেওয়ার অসিয়ত করে যাওয়া আবশ্যক। অসিয়ত না করে গেলে ওয়ারিশরা যদি মৃতের পক্ষ থেকে ফিদয়া আদায় করে, তবে আশা করা যায়, দয়াময় প্রভু তা কবুল করবেন। তবে মৃত ব্যক্তি অসিয়ত না করে গেলে সে ক্ষেত্রে মিরাসের যৌথ সম্পদ থেকে ফিদয়া আদায় করা যাবে না। একান্ত কেউ দিতে চাইলে প্রাপ্তবয়স্ক ওয়ারিশরা তাদের অংশ থেকে দিতে পারবেন।