নিজের পায়ে দাঁড়াতে হলে আপনাকে উদ্যোগী হতে হবে। আর উদ্যোক্তা হওয়ার জন্য ঠিক করতে হবে কী দিয়ে শুরু করবেন। কীভাবে অল্প পুঁজিতে শুরু করা যায় এমন ব্যবসা।
ইচ্ছা এমন এক শক্তি, যা মানুষের স্বপ্নকে বাস্তব রূপ দেয়। এ ইচ্ছার সঙ্গে হতে হবে পরিশ্রমীও। পরিশ্রমই সফলতার চাবিকাঠি। একজন মানুষের মেধা ও শ্রম তাকে সাফল্যের স্বর্ণশিখরে পৌঁছে দেয়।
শুরু হোক এভাবেই
ফ্যাশন হাউজের শোরুমে সুন্দর থ্রিপিস, শাড়ি, চুড়ি, গয়না, শোপিস, জিন্সপ্যান্ট, টি-শার্ট থেকে শুরু করে হাল আমলের ফ্যাশন স্কার্ফ, মানিব্যাগ, ব্যাগ অনেক কিছুই বিক্রি হয়। আপনার এলাকায়ও দিতে পারেন এমন একটি শোরুম, যেখানে হাল ফ্যাশনের সব অনুষঙ্গই বিক্রি হবে একই ছাদের নিচে। তবে শুরুর দিকে অন্যান্য অনুষঙ্গের চেয়ে শুধু পোশাক বিক্রি করলেই ভালো।
নামকরণ
শোরুমের নামটাও অনেকটা ফ্যাশনেবল হওয়া চাই। কারণ নামও অনেক সময় ক্রেতাদের আকৃষ্ট করে। এটা নতুন করে বলার কিছু নেই। দোকানের জায়গাটা ৩০০ থেকে ৪০০ বর্গফুটের মধ্যে হলে ভালো হয়। আর শোরুমে এসি, ট্রায়ালের জন্য আলাদা রুম, দেখার জন্য কয়েক জায়গায় আয়না এবং সুন্দর বসার ব্যবস্থাও রাখতে হবে।
শুরুটা যেমন হবে
একা শুরু না করে কয়েকজন বন্ধুবান্ধব মিলে শোরুম দিলে সব দিক থেকেই সুবিধা। কারণ পোশাক সংগ্রহ, ডিজাইন পছন্দ, শোরুমে সময় দেওয়া, হিসাবনিকাশসহ অনেক কাজই করতে হয়। কর্মচারী রেখে করতে গেলে আয়ের চেয়ে খরচ বেড়ে যাবে। এরপর সিদ্ধান্ত নিতে হবে আপনি নিজে ডিজাইন করা পোশাক বিক্রি করবেন, নাকি পাইকারি মার্কেট থেকে পছন্দের পোশাক কিনে এনে বিক্রি করবেন। তবে পুঁজির অঙ্কটা যেখানে হিসাবি, সে জায়গায় নতুন চ্যালেঞ্জ না নিয়ে পাইকারি মার্কেটের হাজারো ডিজাইন থেকে পছন্দ করে পোশাক কিনে শোরুমে সাজাতে পারেন। মেয়েদের ও শিশুদের নানা ডিজাইনের পোশাক, জিন্স প্যান্ট রেডিমেড কিনলেও টি-শার্ট, পাঞ্জাবি ও ফতুয়া নিজে ডিজাইন করে বিক্রি করতে পারেন।
যেসব পোশাক বিক্রি করবেন
দোকানে সবসময় থাকতে হবে হাল সময়ের পোশাক। বিভিন্ন উপলক্ষ, যেমনÑ ঈদ, নববর্ষে রাখতে পারেন পাঞ্জাবি ও ফতুয়া। এছাড়া বিশেষ দিবস, যেমনÑ ২১ ফেব্রুয়ারি, ২৬ মার্চ, ১৬ ডিসেম্বর, পহেলা বৈশাখ ও পহেলা ফাল্গুনÑ এসব বিশেষ দিন উপলক্ষে শোরুমে তুলতে পারেন বিভিন্ন ধরনের পোশাক। বিভিন্ন দিবস উপলক্ষে দোকানে তুলতে পারেন টাঙ্গাইলের শাড়ি, ব্লক প্রিন্ট শাড়ি। সম্ভব হলে নিজেরা ডিজাইন পছন্দ করে ব্লক করিয়ে নিতে পারেন। তাহলে ব্যতিক্রম কিছু ক্রেতাদের উপহার দিতে পারবেন।
পুঁজি
দোকানের পজিশন, অ্যাডভান্স, ভাড়া স্থানভেদে ভিন্ন। এগুলো ছাড়া পোশাক কেনার জন্য পাঁচ থেকে ৬ লাখ টাকা পুঁজি হলেই চলবে। আর দোকানের সাজসজ্জায় লাগবে ২ লাখ টাকা।
যেসব কাপড় কিনতে পারেন
টি-শার্টে হাফ কটন কাপড় বেশি চলে। এছাড়া পিকে পলো কাপড়ও বর্তমানে বেশ চলছে। শার্টের কাপড় হিসেবে সুতি ও কটন বেশি বিক্রি হয়। পাঞ্জাবিতে সুতি, সিল্ক, হাফসিল্ক, অ্যান্ডি, কটন, খাদি ও তাঁত বেশি বিক্রি হয়। ফরমাল প্যান্টের কাপড়ে কটনের চাহিদা বেশি।
শুরু হোক বিক্রি
দোকান সাজানোর পর প্রতিটি পোশাকের দাম নির্ধারণটাও প্রয়োজন। এতে দর কষাকষি (নিয়ে) কোনো ঝামেলা থাকে না। এক্ষেত্রে টি-শার্ট প্রতিটি ৪০০ থেকে ১ হাজার ৮০০, হাফ ও ফুলশার্ট প্রতিটি ৫০০ থেকে ২ হাজার, পাঞ্জাবি প্রতিটি ৭০০ থেকে ৩ হাজার টাকা রাখতে পারেন।
লাভটাও জানা প্রয়োজন
তৈরি পোশাক বিক্রিতে লাভ তুলনামূলক কম। আর নিজেদের বানানো পোশাকে লাভ বেশি। তৈরি প্রতিটি পোশাকে ১৫ থেকে ২০ শতাংশ লাভ থাকে। আর নিজেদের বানানো পোশাকে ২০ থেকে ২৫ শতাংশ লাভ থাকে।
কিছু টিপস
১. শোরুমটি এমন জায়গায় হতে হবে, যেখানে যাতায়াত সুবিধা এবং লোকসমাগম বেশি থাকে।
২. টাকা লেনদেনের জায়গায় কম্পিউটার ও রসিদের ব্যবস্থা করতে হবে। আর শোরুমের নিজের নামে শপিং ব্যাগও তৈরি করতে হবে।
৩. বিক্রি বাড়ানোর জন্য সব শ্রেণির ক্রেতার চাহিদা অনুযায়ী পোশাক রাখতে পারেন।
৪. শোরুমে গান বাজানোর ব্যবস্থা রাখা যেতে পারে।
৫. নিরাপত্তার জন্য গার্ড ও সিসি ক্যামেরা রাখতে হবে।
৬. প্রতিটি ঋতুতে পোশাকের ধরন, রং, ডিজাইন পাল্টাতে হবে।