এনাম রাজুর তিনটি কবিতা
এক
যদি পূর্ণবার ঘর থেকে বের হয়ে দেখি
গাছ ভরে গেছে নিজের মতো করে
পাখি পৃথিবীকে অভয়ারণ্য ভেবে বাসা বেঁধেছে-
বহুদিন পূর্বে পরিত্যক্ত হওয়া ডাস্টবিনে
তবে আমিও নিজের কথা ভাবব
নিজেকে পূর্ণবার ভালোবাসব পূর্বের চেয়ে ঢের বেশি।
যদি এবার বেঁচে যাই আর টিকে যায় মহৎ পৃথিবী
তবে আর সুসময়ের অপেক্ষা না করে চলে যাব-
সুখপ্রিয়ার কাছে, বলব গোপন কথাগুলো দ্বিধাহীন।
যদি বেঁচে থাকি দেখা হবে যার সঙ্গে
সেই হবে আমার প্রেমিকার মতো পাঠ্য
তাকেই ভালোবাসব তুমুল আবেগে
যদি এ নির্বাসন থেকে মুক্তি মেলে যুক্তির খেসারত দিয়ে
তবে মানুষ হব মানুষের তালিম নিয়ে।
যদি বেঁচে থাকি তো আজন্ম চাকর হব
আর পায়ের তলায় বেঁচে রবো ধুলোর মতো
চুমুর চিহ্ন এঁকে দিব তোমার পায়ে পায়ে।
দুই
বহু উৎসব পেরিয়ে এসেছি নগরীতে
চারদিক শুনশান নীরবতা
লাশের মতো শুয়ে পথ
তার পাশে ক্ষুধার্ত কুকুর।
আজ নগরীর পথ দখল করেছে ভিখারি
কর্মের ফর্দি ছিড়ে গেছে বলে-
নদীর পেটের মতো বহুদূরে কর্মহীনের পাকস্থলী,
তারা চিৎকার করে কিছু বলতে চায়
মিলিয়ে যায় সে আওয়াজ মুখের ভেতর।
অসুস্থ হয়ে পড়ে আছে মানুষ
তাদের পাশে নেই ঈশ্বরের চোখ
ঈশ্বর বসে আছে নগরীর ডিপ ফ্রিজে
পতিতার কান্নায়ও ভাঙে না তার ঘুমের ঘোর।
ধর্মপিতা হারিয়ে গেছে মানবতার গানের আঁধারে
কামনার বাক্স ভেঙে দিতে আসে না সভ্যরা
পৃথিবীর বুকে আজ কতো যে কামনার ঘাম
কেউ সে মূল্য বুঝে না, বুঝতেও চায় না।
তিন
ঐ পাড়াতে যেতে মানা ব্যাধির জ্বরে কাঁপছে
আজ সেখানে চাঁদ ওঠেনি ফুল ফোটেনি
নদীর ঢেউয়ে সুর ওঠেনি পাখিগুলো গান গায়নি
নগ্ন পায়ে নুপুর দেখে জলের স্রোতে মুখ তোলেনি শুশুক।
ঐ পাড়ার এমন মলিন দেহ দেখতে কেউতো চায়নি
কেমন যেনো হঠাৎ করে কেউ কারও খোঁজ নেয়নি
চোখ মেলে তাই হয়নি দেখা পাশের ঘরে হলো কি
নিজের ঘরই পর যেখানে অন্যরা পর নয় কী!
এমন দিনে সবুজ মনে তরুণ কথা একটাই
অবিশ্বাসের দোলাচলে নাচছে নিজের সবটাই
হাতকে এখন পর মনে হয়, পর মনে নাক মুখ ও চোখ
তবুও সবাই তাকিয়ে আকাশ আসবে অদৃশ্য সুখঢেউ।