পাকিস্তানের করাচিতে গত সপ্তাহের বিমান দুর্ঘটনায় নিহত দেশটির শীর্ষ একজন মডেলকে নিয়ে অনলাইনে নানাধরনের আক্রমণ ও গালিগালাজ চালানো হচ্ছে। তার বিরুদ্ধে অভিযোগ, তিনি অনৈতিক জীবনযাপন করতেন।
মডেল জারা আবিদের পোশাক-আশাক ও তার জীবনযাপনের ধারা নিয়ে অনলাইনে সমালোচনার জোয়ারের পর তার অ্যাকাউন্ট নিষ্ক্রিয় করে দেওয়া হয়েছে বলে জানাচ্ছেন বিবিসি নিউজের সায়রা অ্যাশার।
পাকিস্তান ইন্টারন্যাশানাল এয়ারলাইন্সের যে বিমানটি করাচির একটি আবাসিক এলাকায় ভেঙে পড়ে, সেই ফ্লাইটে বিমানের চেক ইন যাত্রী তালিকা অনুযায়ী ভ্রমণ করছিলেন ২৮ বছর বয়সী জারা আবিদ। তিনি ওই বিমানে যাত্রী ছিলেন বলে তার বন্ধুরাও নিশ্চিত করেছেন।
পাকিস্তান কর্তৃপক্ষ এখনো নিহতদের নাম প্রকাশ করেনি। এখন পর্যন্ত তারা শুধু জানিয়েছে, ওই দুর্ঘটনায় দুজনের জীবন রক্ষা পেয়েছে।
প্রথমদিকে খবর ছড়ায় যে, জারা আবিদ বেঁচে গেছেন। এরপর তার ভাই ভুয়া খবর না ছড়ানোর জন্য জনগণের কাছে অনুরোধ জানান বলে সংবাদমাধ্যমে খবর আসে।
জারা আবিদের ইনস্টাগ্রাম, টুইটার ও ফেসবুক অ্যাকাউন্ট এখন আর দেখা যাচ্ছে না এবং এই অ্যাকাউন্ট সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম সাইটগুলো নিজেরাই বন্ধ করেছে না কি তার পরিবার এবং বন্ধুবান্ধবরা বন্ধ করে দিয়েছে, তা স্পষ্ট নয়।
দুর্ঘটনায় জারা আবিদের মৃত্যু নিয়ে যখন তার পরিবার বিপর্যস্ত ও শোকাহত, তখন অনলাইনে তার নিন্দা ও সমালোচনা পরিবার ও বন্ধুদের জন্য বড় একটা মানসিক চাপ বলে জানাচ্ছে বিবিসি নিউজ।
পাকিস্তানের রক্ষণশীল সমাজে আশা করা হয় যে, মেয়েরা শিষ্টাচার মেনে চলবে এবং নম্রতা দেখাবে। যারা কাজ বা অন্য সূত্রে জনসমক্ষে আসেন তাদের ওপর সামাজিক মাধ্যমে কঠোর নৈতিক নজরদারিতে থাকতে হয়।
পাকিস্তানি ফ্যাশান জগতে সবচেয়ে বড় কিছু ব্র্যান্ডের জন্য কাজ করতেন জারা আবিদ। এ বছরের জানুয়ারি মাসে হাম স্টাইল অ্যাওয়ার্ড নামে একটি পুরস্কার সংস্থা তাকে ‘সেরা নারী মডেল’-এর সম্মানে ভূষিত করে।
জারা আবিদের পেশাদারিত্ব ও স্টাইলের জন্য শীর্ষস্থানীয় ডিজাইনাররা তার প্রশংসা করে। এ বছরের শেষ দিকে অভিনেত্রী হিসাবে প্রথম ছবিতে তার কাজ করার কথা ছিল।
গত শুক্রবার যখন খবর ছড়ায় যে দুর্ঘটনা কবলিত করাচি-গামী বিমানটিতে তিনি ছিলেন বলে ধারণা করা হচ্ছে, তখন তার সোশ্যাল মিডিয়া অ্যাকাউন্টে ধর্মীয় মৌলবাদীরা শত শত কমেন্ট পোস্ট করেন, যেখানে তার ধর্মবিশ্বাস নিয়ে প্রশ্ন তোলা হয় এবং তিনি যে ইসলামী ধর্মাচরণ মেনে চলেন না তা নিয়ে মন্তব্য করা হয়।
বেশিরভাগ মন্তব্যে বলা হয়, তার জীবনধারণের জন্য তাকে পরকালে শাস্তি পেতে হবে। তার ‘পাপাচরণ’-এর দৃষ্টান্ত হিসাবে অনলাইনে তার এমনধরনের পোশাক পরা ছবি পোস্ট করা হয়, যা পাকিস্তানের সমাজের জন্য খোলামেলা ও অগ্রহণযোগ্য বলে বিবেচিত হয়।
একজন টুইটার ব্যবহারী নিচের টুইটটিতে লেখেন, ‘যারা বলছে, বিমান দুর্ঘটনার পর সে বেহেস্তে যাবে, একজন মুসলমান হিসাবে আমি তাদের বলব, যেসব নারী সবাইকে তাদের শরীরের অংশ দেখায় আল্লাহপাক তাদের পছন্দ করেন না। জান্নাত শুধু পবিত্র নারী ও পুরুষদের জন্য।’
তবে ফ্যাশান জগতে তার মডেল সহকর্মী, ডিজাইনার এবং অভিনয় শিল্পীদের অনেকেই অকুণ্ঠভাবে জারার প্রশংসা করেছেন এবং বলেছেন তার মৃত্যু ‘ফ্যাশান জগতের জন্য একটা মর্মান্তিক খবর’।
কেউ কেউ বলেছেন, তার গায়ের চাপা রং পাকিস্তানে সৌন্দর্যের নতুন সংজ্ঞা দিয়েছিল।
দক্ষিণ এশিয়ার অন্য দেশগুলোর মতো পাকিস্তানেও ফর্সা রংকে মনে করা হয় সৌন্দর্যের প্রতীক এবং ফর্সা নারীকেই সুন্দরী হিসাবে গণ্য করার ব্যাপক প্রবণতা রয়েছে।