একে তো নতুন ভাইরাস এই করোনা নিয়ে তেমন কিছু জানা নেই বিজ্ঞানীদের, তার ওপর এমনকি উপসর্গবিহীন সংক্রমণের ঘটনাও ঘটছে; ফলে বিজ্ঞানীরা বেশ উদ্বিগ্ন। কেননা কতজন কোনো লক্ষণ ছাড়াই আক্রান্ত হচ্ছেন এবং ‘নীরবে ছড়িয়ে দেওয়া ব্যক্তিরা’ মহামারীটিকে বাড়িয়ে দিচ্ছেন কিনা, তা বোঝা খুব জরুরি।
বিবিসিএ বিষয়ে স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ও গবেষকদের সঙ্গে কথা বলে একটি বিশেষ প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। ১৯ জানুয়ারি সিঙ্গাপুরের একটি গির্জায় জড়ো হয়েছিলেন অনেক ব্যক্তি। তারা তখনও বুঝতে পারেননি ওই অনুষ্ঠান করোনা ভাইরাস ছড়িয়ে পড়া নিয়ে গবেষণায় কত বড় প্রভাব ফেলবে। সেদিন তাদের মধ্যে ছিলেন ৫৬ বছর বয়সী দুই ব্যক্তি, যারা সেদিন সকালেই চীন থেকে এসেছিলেন। পরের সপ্তাহে স্থানীয় তিন ব্যক্তিও সুনির্দিষ্ট কোনো কারণ ছাড়াই করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হলেন। সিঙ্গাপুরের মহামারীর প্রথম দিকের ধন্ধে ফেলা ঘটনাটি নিয়ে তদন্ত করতে দিয়ে বোঝা গেল, এই ভাইরাস কীভাবে এত সফলভাবে নতুন শিকার খুঁজে নেয়।
সিঙ্গাপুরের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সংক্রামক রোগের প্রধান ডা. ভার্নন লি বলেন, ‘আমরা অত্যন্ত ধন্ধে ছিলাম। যে লোকরা একে অপরকে চেনে না তারা কোনোভাবে একে অপরকে সংক্রমিত করেছে, তা-ও অসুস্থতার কোনো চিহ্ন না দেখিয়ে।’ কয়েক দিনের মধ্যে তদন্তকারীরা গির্জার ১৯১ সদস্যের সাথে কথা বলেন এবং জানতে পারেন যে তাদের মধ্যে ১৪২ জন ওই অনুষ্ঠানে ছিলেন। তারা দ্রুত পেয়ে যান সিঙ্গাপুরের স্থানীয়ভাবে আক্রান্ত তিন জনের মধ্যে মধ্যে দুজনই চীনা দম্পতির সঙ্গে একই অনুষ্ঠানে ছিলেন।
কিন্তু ধাঁধা আরও বেড়েছিল যখন জানা গেল, সংক্রমিত তৃতীয় ব্যক্তি ৫২ বছর বয়সী এক নারী ওই অনুষ্ঠানেই ছিলেন না। তিনি সেদিনই পরে একই গির্জার অন্য একটি অনুষ্ঠানে অংশ নিয়েছিলেন। তিনি কীভাবে সংক্রমিত হলেন?
তদন্তকারীরা গির্জার সিসিটিভি রেকর্ডিং ঘাটতে গিয়ে অপ্রত্যাশিত একটি বিষয় খুঁজে পেলেন। ওই মহিলা কয়েক ঘণ্টা পর যে আসনে বসেছিলেন, চীনা দম্পতিরা সেই আসনেই বসেছিলেন।
ডা. লি বলেন, ভাইরাসটি কারও শরীরে থাকলে তিনি লক্ষণ টের না পেলেও তা ছড়াতে পারেন। এটি এমন একটি উদ্ঘাটন ছিল, যা বিশ্বজুড়ে পরে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে।
কিন্তু ভাইরাসটি যদি লক্ষণই ছাড়াই নীরবে এবং অদৃশ্যভাবে মানুষের মধ্যে ছড়িয়ে যায়, তবে রোগটি কীভাবে রোখা যাবে? এ ক্ষেত্রে সচেতন হওয়াটা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ।