যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্ক অঙ্গরাজ্যের বাফেলো শহরে পুলিশের বিশেষ শাখা থেকে একযোগে ৫৭ জন কর্মকর্তা পদত্যাগ করেছেন। তারা যুক্তরাষ্ট্র পুলিশের ‘ইমার্জেন্সি রেসপন্স’ টিমের সদস্য ছিলেন।
মার্কিন সংবাদমাধ্যম দ্য ওয়াশিংটন পোস্টের খবরে বলা হয়, এর আগে একজন বয়স্ক নাগরিকের সঙ্গে নির্দয় আচরণের দায়ে দুই কর্মকর্তাকে সাময়িক বরখাস্ত করে পুলিশ কর্তৃপক্ষ। ওই বরখাস্তের প্রতিবাদ স্বরুপ গতকাল শুক্রবার একযোগে পদত্যাগের ঘোষণা দেন ৫৭ কর্মকর্তা। পদত্যাগকারী বিশেষ শাখা থেকে পদত্যাগ করলেও পুলিশ বাহিনী থেকে পদত্যাগ করেননি তারা।
কৃষ্ণাঙ্গ জর্জ ফ্লয়েডের হত্যার প্রতিবাদে বিক্ষোভে ৭৫ বছরের একজন শ্বেতাঙ্গ বৃদ্ধকে ধাক্কা মেরে মাটিতে ফেলে দেয় দুই কর্মকর্তা। এই ন্যাক্কারজনক আচরণের ভিডিও ছড়িয়ে পড়লে যুক্তরাষ্ট্র জুড়ে তীব্র প্রতিবাদ ও সমালোচনা শুরু হয়। এ ঘটনায় ইতিমধ্যেই তদন্ত প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে।
ছড়িয়ে পড়া ওই ভিডিওতে দেখা গেছে, ওই বৃদ্ধ কারফিউ কার্যকরের জন্য দায়িত্বে থাকা পুলিশের দিকে অগ্রসর হলে পুলিশ তাকে ধাক্কা মেরে ফেলে দেয়। এরপর পড়ে গিয়ে তিনি মাথায় আঘাত পান। বৃদ্ধকে যখন মাটিতে পড়ে ছিলেন তখন তার কান থেকে গলগল করে রক্ত বের হতে দেখা যায়। পরে তাকে হাসপাতালে নিয়ে গেলে জানা যায়, মাথায় মারাত্মক আঘাত লেগেছে ওই বৃদ্ধের।
এ ঘটনায় বিবৃতি দেয় বাফেলো পুলিশ বিভাগ। এতে বলা হয়, ওই ব্যক্তি হোঁচট খান এবং বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে ধ্বস্তাধ্বস্তির সময় তিনি মাটিতে পড়ে যান। বিবৃতিটি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়ে যায় এবং ক্ষোভের আগুন বৃদ্ধি পায়।
পরে বাফেলো পুলিশের একজন মুখপাত্র জেফ রিনোল্ডো বলেন, ‘যে অফিসাররা ওই বিবৃতি দিয়েছিলেন, তারা ঘটনার সঙ্গে প্রত্যক্ষভাবে জড়িত ছিলেন না।’
বাফেলো পুলিশ বেনেভোলেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি জন ইভান্স বলেন, ‘শুধু নির্দেশ পালনের দায়ে বাহিনীর দুই কর্মকর্তার সঙ্গে যে আচরণ করা হয়েছে তার প্রতিবাদে ৫৭ জন কর্মকর্তা পদত্যাগ করেছেন।’
নির্মম নির্যাতনের শিকার ওই বৃদ্ধের পরিচয় নিশ্চিত করেছে স্থানীয়রা। ওই বৃদ্ধের নাম মার্টিন গাগিনো। গুরুতর আহত অবস্থায় তাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছিল। দীর্ঘদিন ধরেই তিনি শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভে অংশ নিয়ে আসছেন এবং মানবাধিকারের ব্যাপারে তিনি একজন বলিষ্ঠ কণ্ঠস্বর বলে জানা গেছে।
বাফেলোর মেয়র বাইরন ব্রাউন বলেছেন, ‘বরখাস্তকৃত দুই কর্মকর্তার ব্যাপারে যেন যথাযথ প্রক্রিয়া অনুসরণ করা হয়। আমি তাদের চাকরিচ্যুত করতে বলছি না।’
নির্যাতিত বৃদ্ধের ব্যাপারে মেয়র বলেন, ‘তাকে বহুবার চলে যেতে বলা হয়েছিল।’
নিউইয়র্ক রাজ্যের গভর্নর অ্যান্ড্রু কুমো এ ঘটনার তীব্র সমালোচনা করেছেন। এক টুইট বার্তায় এ ঘটনাকে পুরোপুরি অযৌক্তিক এবং খুবই ন্যাক্কারজনক হিসেবে বর্ণনা করেছেন তিনি।