মুখে মাস্ক ব্যবহারের বিষয়ে আগের অবস্থান থেকে সরে এসেছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও)। করোনাভাইরাসের বিস্তার রোধে সংস্থাটির পক্ষ থেকে নতুন পরামর্শ হিসেবে জনসমক্ষে অবশ্যই মাস্ক পরে চলার কথা বলা হচ্ছে। গতকাল শুক্রবার ডব্লিউএইচও জানিয়েছে, নতুন তথ্যে দেখা গেছে, ফেস মাস্ক ‘সম্ভাব্য সংক্রামক ড্রপলেটের’ জন্য বাধা হিসেবে কাজ করতে পারে।
তবে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার এ পরামর্শের আগেই বেশ কিছু দেশ জনসমক্ষে নাগরিকদের চলাচলের ক্ষেত্রে মাস্ক পরার পরামর্শ, এমনকি তা বাধ্যতামূলক করেছে।
এর আগে করোনাভাইরাস মহামারির শুরুতে ডব্লিউএইচও মাস্ক পরার ওপর জোর দেয়নি। সে সময় সংস্থাটি বলেছিল, কেবল দুদল মানুষের মাস্ক পরা উচিত। যারা অসুস্থ বা যাদের মধ্যে উপসর্গ দেখা দিয়েছে। আর যারা করোনাভাইরাস থাকতে পারে এমন কারও চিকিৎসা ও সেবা করছে। কিন্তু শুক্রবার তারা মাস্ক নিয়ে তাদের নির্দেশনা বদলেছে।
ডব্লিউএইচও বলছে, জনসমাগমের এলাকাতেও সবার মাস্ক পরে থাকা উচিত। কারণ তা মুখ থেকে বের হওয়া ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র জলকণার মাধ্যমে ভাইরাসের ছড়িয়ে পড়া রোধ করতে পারে।
ডব্লিউএইচও সাধারণ মানুষদের পরতে বলছে কাপড়ের মাস্ক। মেডিকেল মাস্ক কেবল স্বাস্থ্যসেবা কর্মীদের জন্য সংরক্ষণ থাকা উচিত বলে তারা পরামর্শ দিচ্ছে। তবে ষাটোর্ধ্ব ব্যাক্তি যাদের শারীরিক অবস্থা খারাপ তারা নিজেদের ভালোভাবে সুরক্ষার জন্য মেডিকেল গ্রেডের মাস্ক ব্যবহার করতে পারেন বলে জানিয়েছে সংস্থাটি।
জনস হপকিন্স বিশ্ববিদ্যালয়ের হালনাগাদ তথ্য অনুযায়ী, গত বছরের শেষের দিকে শুরু হওয়া করোনাভাইরাস মহামারিতে বিশ্বজুড়ে ৬৭ লাখ মানুষ করোনা সংক্রমণের শিকার হয়েছেন। প্রায় ৪ লাখ মানুষ মারা গেছেন।
সংস্থাটি বলেছে, সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলেোতে নতুন সমীক্ষা পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে নতুন দিকনির্দেশনা দেওয়া হচ্ছে। ডাব্লিউএইচওর কোভিড -১৯-এর প্রযুক্তিগত নেতৃত্বে থাকা বিশেষজ্ঞ ডা. মারিয়া ভ্যান কেরখোভ বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে বলেন, ‘আমরা সরকারগুলোকে সাধারণ মানুষকে মাস্ক পরার বিষয়ে উৎসাহী করার পরামর্শ দিচ্ছি।’
তবে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা সতর্ক করেছে, করোনা সংক্রমণের ঝুঁকি কমাতে ব্যবহার করা যেতে পারে, এমন সরঞ্জামের মধ্যে মাস্ক একটি। এটি যেন মিথ্যা সুরক্ষাকবচের ধারণা তৈরি না করে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মহাপরিচালক তেদরোস আধানোম গেব্রেয়াসুস বলেছেন, ‘মাস্ক নিজ থেকে আপনাকে কোভিড-১৯ থেকে রক্ষা করবে না।’
বিবিসি অনলাইনের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, জনসমক্ষে মাস্ক ব্যবহার করার বিষয়ে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার দিকনির্দেশনায় এটি একটি বড় পরিবর্তন। দীর্ঘদিন ধরে সংস্থাটির বিশেষজ্ঞরা মাস্ক মিথ্যা সুরক্ষার ধারণা তৈরি করে-এমন পরামর্শে আটকে ছিলেন। মাস্ক পরা নিয়ে বিতর্ক এখনো চালু থাকলেও এটি সংক্রমণ ঝুঁকি রোধ করতে পারে, এমন প্রমাণ পাওয়ার পর তা সংস্থাটি মেনে নিয়েছে।
যেখানে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা সম্ভব হয় না, যেমন গণপরিবহন, বিপণিকেন্দ্র, শরণার্থী শিবিরের মতো জায়গাগুলোতে বাড়িতে তৈরি কাপড়ের মাস্ক দিয়ে অবশ্যই মুখ ঢাকতে হবে, যাতে সংক্রমণের বিস্তার না ঘটে। যাঁদের বয়স ষাটের বেশি এবং স্বাস্থ্যঝুঁকি আছে, তাদের সুরক্ষার জন্য মেডিকেল গ্রেড মাস্ক পরার পরামর্শ দিয়েছে সংস্থাটি।
মাস্ক ব্যবহারের নিয়ম
# মাস্কে মুখ আর নাক ঢাকার পর যেন স্বচ্ছন্দে শ্বাস নেওয়া যায় বিষয়টা খেয়াল রাখতে হবে।
# মাস্ক পরার আগে বা খোলার পর হাত ভালো করে ধুয়ে নিতে হবে বা হ্যান্ড স্যানিটাইজার ব্যবহার করতে হবে।
# মাস্কে হাত দেওয়া যাবে না।
# ব্যবহৃত কাপড়ের মাস্ক সঙ্গে সঙ্গে ধোয়া সম্ভব না হলে তা একটি প্লাস্টিকের ব্যাগে ভরে আলাদা রাখতে হবে।
# বুঝতে হবে কেবল সাধারণ একটি মাস্ক বা বাসায় তৈরি করা মুখোশ আপনাকে ভাইরাস থেকে বাঁচাতে খুব কার্যকর হবে না। কিন্তু আপনার কাছ থেকে অন্যদের মধ্যে ছড়ানোর সম্ভাবনা কমিয়ে দেবে।