দেশের শিক্ষাব্যবস্থা অনুযায়ী প্রাথমিকে প্রতি শিক্ষাবর্ষে তিনটি পরীক্ষা নেওয়া হয়, মাধ্যমিকে নেওয়া হয় দুটি। এ ছাড়া স্কুলগুলো তাদের মতো করে একাধিক ক্লাস টেস্ট বা সিটি পরীক্ষা নিয়ে থাকে। তবে চলতি শিক্ষাবর্ষের ছয় মাসে একটি পরীক্ষাও নেওয়া সম্ভব হয়নি। করোনার প্রাদুর্ভাব যেভাবে বাড়ছে তাতে কবে নাগাদ স্কুল খুলবে তাও বলা যাচ্ছে না।
এ অবস্থায় মাত্র একটি পরীক্ষার পরিকল্পনা নিয়ে এগোচ্ছে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর এবং মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা (মাউশি) অধিদপ্তর। তাও সম্ভব হবে যদি অন্তত সেপ্টেম্বরেও স্কুল খোলা সম্ভব হয়। তবে প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী (পিইসি) এবং জুনিয়র স্কুল সার্টিফিকেট (জেএসসি) পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হওয়া নিয়ে সংশয় কাটছে না।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, প্রাথমিকে প্রতিবছর প্রথম ও দ্বিতীয় সাময়িক পরীক্ষা এবং বার্ষিক পরীক্ষা নেওয়া হয়। এবার মে মাসের শুরুতে প্রথম সাময়িক পরীক্ষা হওয়ার কথা ছিল। করোনা পরিস্থিতিতে সেটা স্থগিত করা হয়েছে। জুলাই-আগস্ট মাসে দ্বিতীয় সাময়িক পরীক্ষা হওয়ার কথা। সেটি নেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। মাধ্যমিকে জুন-জুলাইয়ে অর্ধবার্ষিক পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা। সেটিও হচ্ছে না। ফলে আগামী ডিসেম্বরে শুধু বার্ষিক পরীক্ষা নেওয়া যায় কি না, সেই পরিকল্পনা করা হচ্ছে। আর যদি আগামী সেপ্টেম্বরেও স্কুল খোলা সম্ভব না হয় তাহলে শিক্ষাবর্ষ আগামী বছরের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত বাড়ানোর পরিকল্পনা রয়েছে। সেটা করা হলেও পরীক্ষা নেওয়া হবে একটাই।
প্রতিবছরের শুরুতেই প্রাইভেট টিউশনি, কোচিং নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়ে পিইসি ও জেএসসি পরীক্ষার্থীরা। তবে এবার ১৭ মার্চ থেকে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় স্কুলেও পড়ালেখা নেই, কোচিং-প্রাইভেটও পড়তে পারছে না তারা। কোনো ধরনের পরীক্ষাতেও বসতে পারছে না। এতে করে এ দুটি পাবলিক পরীক্ষার জন্য তারা কতটা প্রস্তুত, তা জানতে পারছেন না শিক্ষক, অভিভাবকরা। আর বছরের শেষ দিকে স্কুল খুললেও সিলেবাস শেষ না করিয়ে পরীক্ষা নেওয়া যুক্তিযুক্ত হবে না বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। এ অবস্থায় পিইসি ও জেএসসি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হওয়া নিয়ে সংশয় থেকেই যাচ্ছে।
তবে স্কুল বন্ধের পর থেকেই সংসদ টেলিভিশনে প্রাথমিক ও মাধ্যমিকের ক্লাস প্রচার শুরু করেছে দুই অধিদপ্তর। তবে শহরের শিক্ষার্থীরা এসব ক্লাস দেখতে পেলেও মফস্বলের শিক্ষার্থীরা পুরোপুরি তা পারছে না। কারণ, গ্রামে সবার বাড়িতে ডিশ সংযোগ নেই। আবার কিছু এলাকায় ডিশ সংযোগ থাকলেও সংসদ টেলিভিশন দেখানো হয় না। অনেক দরিদ্র পরিবারে টেলিভিশনই নেই। ৮০ শতাংশ শিক্ষার্থী ক্লাস দেখছে বলে অধিদপ্তর দাবি করলেও বাস্তবে এই হার ৪০ থেকে ৫০ শতাংশের বেশি নয় বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা।
মাউশি অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ড. সৈয়দ গোলাম ফারুক বলেন, ‘কবে স্কুল খুলবে, এর পুরোটাই নির্ভর করছে করোনা পরিস্থিতির ওপর। তাই পরীক্ষা নিয়ে আমরা আর ভাবছি না। সংসদ টেলিভিশনেই আমরা অক্টোবরের মধ্যে সিলেবাস শেষ করতে চাই। তবে বার্ষিক পরীক্ষা ছাড়া অন্য পরীক্ষার ব্যাপারে ভাবার সুযোগ কম। যারা ক্লাস দেখতে পারছে না তাদের নিয়েই আমাদের যত চিন্তা। তাই টেলিফোনে শিক্ষা পরামর্শও চালু করা হচ্ছে। শিক্ষার্থীরা ফোন করে শিক্ষকদের কাছ থেকে সরাসরি পরামর্শ নিতে পারবে।’
জানতে চাইলে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মো. ফসিউল্লাহ বলেন, ‘আমরা এখন সমাপনী বা বার্ষিক বাদে অন্য পরীক্ষা নিয়ে ভাবছি না। শিশু শিক্ষার্থীদের বাড়তি কোনো চাপ না দিয়ে পড়াশোনায় মনোনিবেশের নানা উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এরই মধ্যে সংসদ টেলিভিশনে পাঠদান চলছে। আমরা শিক্ষকদের বলেছি বাড়িতে বসে শিক্ষার্থীরা যাতে পড়াশোনায় মনোনিবেশ করে, সে বিষয়ে যেন খেয়াল রাখেন।’ তিনি আরো বলেন, ‘স্কুলে যে পর্যন্ত পাঠদান হয়েছে এবং টেলিভিশনে যতটুকু হয়েছে তার ওপর প্রশ্ন তৈরি করে শিক্ষার্থীদের বাড়ি পৌঁছে দেওয়ার জন্য। এই প্রশ্নের আলোকে শিক্ষার্থীরা ঘরে বসে পরীক্ষার চর্চা করতে পারবে।’
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, মোবাইলের মাধ্যমে অন্তত ৯৮ শতাংশ শিক্ষার্থী বা অভিভাবকের কাছে শিক্ষা পরামর্শ ও শ্রেণি পাঠ পৌঁছানো সম্ভব। এ কারণেই প্রাথমিক ও মাধ্যমিকে হেল্পলাইন চালুর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। ৩৩৩৬ নম্বরে ফোন করে শিক্ষকদের কাছ থেকে শ্রেণি পাঠ ও পরামর্শ নিতে পারবে শিক্ষার্থীরা। এতে পাঁচ মিনিট পর্যন্ত ফ্রি কথা বলা যাবে। এটি খোলা থাকবে ২৪ ঘণ্টা।