আত্মপ্রত্যয়ী ও ইতিবাচক মনের মানুষের সঙ্গে মিশলে, কাজ করলে অনেক কিছু শেখা ও জানা যায়
ইতিবাচক মানসিকতার মানুষের সংস্পর্শে এলে নিজেও আত্মবিশ্বাসী এবং আত্মপ্রত্যয়ী হওয়া যায়। যদিও আমাদের চারপাশে নেতিবাচক মানুষের সংখ্যাই বেশি। আর এসব নেতিবাচক মানুষের ভিড়ে ইতিবাচক মনের মানুষ খুঁজে পাওয়া এখন মুশকিল। যারা আত্মপ্রত্যয়ী ও ইতিবাচক মনের মানুষ, তাদের সঙ্গে মিশলে, কাজ করলে অনেক কিছু যেমন শেখা যায়, তেমনি জীবনকে নতুন করে জানা যায়।
নেপালের বিখ্যাত অনুপ্রেরণাদায়ী বক্তা রজত আচারিয়া প্রশ্নোত্তরের ওয়েবসাইট কোরাতে যারা আত্মপ্রত্যয়ী, তারা দেখতে কেমন তা নিয়ে একটি লেখা প্রকাশ করেছেন। হীরা দেখলেই যেমন টের পাওয়া যায় তার ঝলক, তেমনি আপনি দূর থেকেই আত্মপ্রত্যয়ী ও ইতিবাচক মনের মানুষকে চিনতে পারবেন।
তাদের চোখ উদ্দীপ্ত ও কৌতূহলী
আপনি যদি খেয়াল করেন, যারা আত্মবিশ্বাসী মানুষ, তারা কৌতূহলী হন। নতুনকে চেনার ইচ্ছা, পুরোনোকে নতুন করে জানতে তারা আগ্রহী। সেসব ইতিবাচক মানুষের চোখের দিকে তাকালে আপনি আত্মপ্রত্যয়ের ঝলক দেখতে পাবেন।
তারা দায়িত্ব নিয়ে কথা বলেন
যারা আত্মপ্রত্যয়ী, তাদের কথায় আপনি কখনোই ‘যদিও’, ‘কিংবা’ ও ‘কিন্তু’ এমন শব্দের উপস্থিতি টের পাবেন না। এমনকি তাদের শরীরী ভাষাতেও কখনও দ্বিধার অস্তিত্ব পাবেন না আপনি। তারা যা বলেন, বুঝে বলেন। নিজের প্রতিটি শব্দ ও বাক্য তারা নিয়ন্ত্রণ করে ব্যবহার করেন। এমনকি কখনও দ্বিধা বা সংকোচে পড়লে সেসব প্রত্যয়ী মানুষ তা মস্তিষ্কের জোরে সমাধান করেন। তারা যা করেন, তা দায়িত্ব নিয়ে করেন, অন্যকে দোষারোপ কিংবা কটু কথা কখনোই তারা বলেন না। সমালোচনার ক্ষেত্রে তারা ইতিবাচকভাবে গঠনমূলক কথা বলেন।
তাদের উপস্থিতি দূর থেকেই টের পাওয়া যায়
আপনি হয়তো অফিসের মিটিংয়ে প্রতিদিনই থাকেন অথচ কেউই আপনার উপস্থিতি টের পায় না। আবার সামাজিক কোনো অনুষ্ঠানে আপনাকে কেউ যেন দেখেও দেখে না। অথচ যারা আত্মপ্রত্যয়ী, তারা যে অনুষ্ঠান বা অফিস মিটিংয়ে উপস্থিত থাকেন না কেন তাদের উপস্থিতি দূর থেকেই টের পাওয়া যায়। তারা নিজের চারপাশে প্রভাব তৈরি করতে পারেন। সেসব মানুষ অন্যদের সঙ্গে নিজেকে মানিয়ে নেন দ্রুত। পরিস্থিতি ও পরিবেশকে গুরুত্ব দিয়ে তারা নিজেকে উপস্থাপন করেন।
তাদের ভয় নেই
ঊর্ধ্বতন কর্তাকে কী কথা বলব না বলব, বললে কী হয় না হয়Ñ এমন জড়তা আমাদের মধ্যে বেশিরভাগেরই কাজ করে। যারা আত্মপ্রত্যয়ী, তারা ইতিবাচকভাবে সামনে পা রাখতে ভয় পান না। তারা অন্যকে ভয় পেয়ে নিজেকে গুটিয়ে নেন না, যা সঠিক এবং ইতিবাচক তা-ই গ্রহণ করে নিজের অবস্থান তৈরি করেন। সাহস, আত্মপ্রত্যয়ী ও ইতিবাচক মানুষের পেশাজীবন ও ব্যক্তিজীবনে নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠার অন্যতম অস্ত্র।
নিজেকে নিয়ে তারা সন্তুষ্ট
আপনি যদি নিজেকে নিয়ে দ্বিধায় থাকেন, তাহলে নিজেকে নিয়ে কখনোই সন্তুষ্ট থাকতে পারবেন না। যারা আত্মপ্রত্যয়ী, তারা নিজেকে নিয়ে সবসময় সন্তুষ্ট। আবার নিজেকে নির্দিষ্ট লক্ষ্যে নিয়ে যাওয়ার জন্য প্রতিনিয়ত প্রচেষ্টার মাধ্যমে ছাপিয়ে যান তারা। আপনি দুর্বল প্রত্যয়ের মানুষ হলে নিজের অস্তিত্ব নিয়ে কখনোই সন্তুষ্ট হতে পারবেন না। যারা ইতিবাচক ও আত্মপ্রত্যয়ী, তারা সবসময়ই নিজের সঙ্গে বোঝাপড়ায় অনন্য হন।
তারা প্রশ্ন করেন
আপনি কতটা সফল হবেন তা নির্ভর করছে আপনি কেমন প্রশ্ন করতে পারেন। আমরা নিজেকে নিয়ে দ্বিধায় থাকি বলে প্রশ্ন রাখতে ভয় পাই; কিন্তু যারা আত্মপ্রত্যয়ী, তারা যে কোনো মুহূর্তেই প্রশ্ন করতে পারেন। যে কোনো গল্প-আড্ডায়ও তারা প্রশ্নকর্তা হিসেবে আবির্ভূত হয়ে চারপাশের পরিবেশই বদলে দেন। তাদের কৌতূহলী মনের বিস্তৃতি প্রশ্ন থেকেই টের পাওয়া যায়। কোনো রকমের দ্বিধা ছাড়াই প্রশ্ন করতে পারেন তারা।
তারা দ্রুত সিদ্ধান্ত নিতে সিদ্ধহস্ত
আমাদের চারপাশে আমরা অনেক মানুষকেই দেখি, যারা সিদ্ধান্ত নিতে সময় নেন। আবার অনেকেই সিদ্ধান্ত নিয়ে দ্বিধায় পড়েন। যারা প্রত্যয়ী, তাদের প্রতিদিনকার জীবনধারাই তাদের মধ্যে সঠিক সিদ্ধান্ত গ্রহণের দক্ষতা তৈরি করে। খেলার মাঠ থেকে শুরু করে অফিসের বোর্ড মিটিংয়ে তাদের ত্বরিত সিদ্ধান্ত আমাদের চমকে দেয়। নিখুঁত সিদ্ধান্ত গ্রহণের সক্ষমতায় আমাদের চমকে দেন আত্মপ্রত্যয়ীরা।
তাদের লক্ষ্য অনেক দূরে
আমরা প্রতিদিন কখন ছুটির দিন আসবে, কখন বাড়ি ফিরবÑ এমন সব ছোট ছোট লক্ষ্য নিয়ে এগিয়ে যাই। কিংবা আগামী বছর কোথায় ঘুরতে যাব, কোন মডেলের গাড়ি কিনবÑ তা ঠিক করে নিজের জীবনের গ-ি ছোট করে ফেলি। যারা আত্মপ্রত্যয়ী, তারা বয়স ৩০ হলে কী করবেন, বয়স ৪০ হলে কী করবেনÑ তা এখনই জানেন। তারা নিজের পেশাজীবন ৪০ বছর পরে কোথায় দেখবেন তা এখনই ঠিক করে রেখেছেন। তারা যা করেন তা ভেবেচিন্তে-বুঝে করেন।
তারা সবসময়ই সৎ
যারা আত্মপ্রত্যয়ী, তারা সবসময় পরিস্থিতি-বাস্তবতা ও নিজের সঙ্গে সততার সঙ্গে আচরণ করেন। নিজের ভুলত্রুটি খুব সহজেই যেমন তারা স্বীকার করেন, তেমনি অন্যদের ভুলত্রুটি মুখের ওপরই বলে দেন তারা। নিরপেক্ষতা তারা পরিহার করে চলেন। যা সত্য, যা ইতিবাচক, যা রঙিনÑ তাই সবসময় বলেন আত্মপ্রত্যয়ী মানুষ। সূত্র : কোরা