শেরপুর জেলার নকলা উপজেলায় জাম্বুরার বাম্পার ফলন হয়েছে। এখানকার জাম্বুরা বেশ বড় ও সুস্বাদু হওয়ায়, দেশের বিভিন্ন জেলা-উপজেলা শহরসহ রাজধানী ঢাকায় যথেষ্ট চাহিদা রয়েছে। স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে নকলার জাম্বুরা ট্রাকে ট্রাকে রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় যাচ্ছে। এই জাম্বুরা ব্যবসার সাথে জড়িত হয়েছেন উপজেলার অন্তত অর্ধশত পরিবার। তারা এই মৌসুমী ফলের ব্যবসার আয়ে তাদের সংসার ও ছেলে মেয়ের পড়া-লেখার খরচ বহন করেন।
জাম্বুরা ব্যবসায়ীদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, তারা সারা বছর বিভিন্ন মৌসুমী ফলের ব্যবসা করেন। তার মধ্যে জাম্বুরা, জলপাই, বেল, জাম, আমড়া, আম, কাঁঠালসহ বিভিন্ন মৌসুমী ফল উল্লেখযোগ্য। মৌসুমের শুরুতেই এখানকার পাইকাররা বাড়ী বাড়ী ঘুরে অগ্রীম টাকা দিয়ে অপেক্ষাকৃত কম দামে মালিকদের কাছে গাছের ফল চুক্তিতে কিনে রাখেন। পরিপক্ক হলে ওইসব ফল গাছ থেকে পেড়ে বিভিন্ন জেলা-উপজেলাসহ রাজধানী ঢাকায় সরবরাহ করেন। তারা জানান, মাসে অন্তত ৮ থেকে ১০বার ঢাকাসহ বিভিন্ন এলাকায় সরবরাহ করতে পারেন।
তাদের দেয়া হিসাব মতে, বছরে অন্তত শত’বার চালান করেন তারা। প্রতিচালানে এক হাজার ৫০০ টাকা থেকে ২ হাজার টাকা করে তাদের লাভ থাকে। এতে করে প্রতি পাইকারের প্রতি বছরে এক লাখ ৫০ হাজার টাকা থেকে লাখ টাকা পর্যন্ত লাভ হয়। এ লাভের টাকাতেই চলে তাদের সংসার ও ছেলে মেয়েদের শিক্ষা খরচ।
এমন এক মৌসুমী ফল বিক্রেতা উপজেলার জালালপুর এলাকার শ্রী রতন চন্দ্র তিলক দাস জানান, তার মতো অন্তত অর্ধশত পাইকার এই নকলা উপজেলাতে আছেন, যারা বাড়ী বাড়ী ঘুরে ফলের গাছ চুক্তিতে কিনে রেখে পরে ঢাকাসহ বিভিন্ন এলাকায় বিক্রি করে থাকেন। তাদের মধ্যে, জালালপুরের আব্দুল মিয়া, কব্দুল আলী, তারা মিয়া ও মস্তু মিয়া; চরকৈয়া এলাকার বাবুল মিয়া, আব্দুল আলী ও শহিদুল; কায়দা গ্রামের আবুল মিয়া, সাহাপাড়া এলাকার রুপচাঁন, ধনাকুশা এলাকার আসাদুলসহ অন্তত ৩০ থেকে ৩৫ জন মৗসুমী ফল ব্যবসায়ী উল্লেখ যোগ্য।
রতন জানায়, মৌসুমী ফলের ব্যবসার আয় দিয়েই জীবন জীবীকা নির্বাহ করেন তারা। সে ১৪ বা ১৫ বছর ধরে এই ব্যবসা করে আসছেন। প্রতিটি ফলের মৌসুমে অন্তত ১০ থেকে ১৫ টি চালান দিতে পারেন। চলতি মৌসুমে গত দুই মাসে ৩০ হাজার টাকার মুলধন খাটিয়ে অন্তত ২০ হাজার টাকা লাভ পেয়েছেন।
মৌসুমী ফল ব্যবসায়ী আব্দুল আলী ও শহিদুল জানান, প্রতি চালানে তাদের ৮ হাজার থেকে ১০ হাজার টাকার মাল যায়, তা থেকে তাদের ৮ হাজার টাকা থেকে ১০ হাজার টাকা রাব হয়। তবে পরিবহণ ব্যয়, ফল পাড়ার শ্রমিক ও ফলের মালিকের খরচ বাদে প্রতি চালানে এক হাজার টাকা থকে এক হাজার ৫০০ টাকা লাভ থাকে। প্রতি জাম্বুরা গাছ থেকেই তাদের আয় হয় এক হাজার টাকা থকে এক হাজার ৫০০ টাকা। আর খরচ বাদে একটি গাছ থেকেই তাদের লাভ হয় এক হাজার টাকা থেকে এক হাজার ২০০ টাকা।
ফল ব্যবসায়ীরা জানান, সরকার যদি সহজ ঋণে তাদের জন্য ব্যাংক লোনের ব্যবস্থা করত, তাহলে তারা আত্ম নির্ভরশীল ও স্বাবলম্বী হতেন। তাদের দেখাদেখি অনেকেই এই ব্যবসার প্রতি ঝুঁকতেন। ফলে কিছুটা হলেও বেকারত্ব কমত বলে মনে করছেন সুশীল সমাজের নেতৃবৃন্দ।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ পরেশ চন্দ্র দাশ জানান, নকলার মাটি জাম্বুরাসহ যেকোন ফল চাষের জন্য উপযোগী। উপজেলায় অগণিত ফলদায়ী জাম্বুরা গাছ রয়েছে। এসব গাছের জাম্বুরা বেশ বড় ও সুস্বাদু। তাই অন্যান্য এলাকায় এখানকার জাম্বুরার বেশ কদর রয়েছে। তিনি আরো বলেন, যে কেউ জাম্বুরার করে স্বাবলম্বী হতে পারেন। ফল চাষ বৃদ্ধির লক্ষ্যে কৃষকদের নিয়মিত উদ্বুদ্ধ করা হচ্ছে। তাদেরকে কৃষি অফিস থেকে প্রয়োজনীয় পরামর্শ সেবা ও প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে বলে তিনি জানান।