দেশে পেঁয়াজের দাম নিয়ে অস্থিরতা যখন ক্রমেই বাড়ছে, ঠিক তখনই শেরপুরের নকলা উপজেলায় বিভিন্ন এলাকায় চাষ করা আগাম মৌসুমের মুড়িকাটা কাঁচা পেঁয়াজ বাজারে উঠতে শুরু করেছে। আর মুড়িকাটা এই কাঁচা পেঁয়াজ বরাবরের চেয়ে বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে।
পাতাসহ কাঁচা পেঁয়াজ প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে ১০০ টাকা থেকে ১২০ টাকা করে। কয়েক সপ্তাহ ধরে শুকনা পেঁয়াজের দাম পর্যায়ক্রমে বেড়ে প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে ২৪০ টাকা থেকে ২৫০ টাকা করে। তাই পাতাসহ কাঁচা পেঁয়াজের চাহিদা আকাশচুম্বী এবং সর্বত্রই।
গ্রাম এলাকায় শীতকালীন শাক সবজি খেতে সুস্বাদু করতে পেঁয়াজ পাতার গুরুত্ব অপরিসীম। তাই পাতাসহ নতুন পেঁয়াজের চাহিদা ক্রমেই বাড়ছে। এই সুযোগকে কাজে লাগাতে আগাম পেঁয়াজ চাষীরা নির্ধারিত সময়ের আগে ক্ষেত থেকে অপরিপক্ক পেঁয়াজ তোলে পাতাসহ বিক্রি করে বাড়তি (কাঁচা) টাকা আয় করছেন। আর পাতাসহ এসব কাঁচা পেঁয়াজ বাজারে আঁটি আকারে বিক্রি হচ্ছে, তবে কোন কোন ক্ষেত্রে পাতাসহ কেজি হিসেবেও বিক্রি করতে দেখা যায়। ৪ থেকে ৫টি কাঁচা পেঁয়াজের সমন্বয়ে করা একটি আঁটি ২৫ টাকা থেকে ৩০ টাকা করে এবং কেজি হিসেবে ১০০ টাকা থেকে ১২০ টাকা করে খুচরা বিক্রি হচ্ছে। পাইকারী হিসেবে বিক্রি হচ্ছে প্রতি কেজি ৮০ টাকা থেকে ৯০ টাকা করে। বাজারে মুড়িকাটা নতুন পেঁয়াজ তথা পাতাসহ কাঁচা পেঁয়াজ উঠতে শুরু করায়, শুকনা পেঁয়াজের দাম এরইমধ্যে হু হু করে কমতে শুরু করেছে। যদিও পেঁয়াজের ভরা মৌসুম শুরু হতে আরও ২ কি ৩ সপ্তাহ লাগবে।
১৯ নভেম্বর সোমবার বিকালে উপজেলার বিভিন্ন বাজারে সরজমিনে ঘুরে দেখা গেছে, প্রতি কেজি শুকনা পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ২০০ টাকা থেকে ২২০ টাকা করে, কাচা পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে প্রায় এর অর্ধেক দামে। তাই শুকনা পেঁয়াজের চেয় কাঁচা পেঁয়াজের চাহিদা দ্বিগুণ বেড়েছে।
উপজেলা পর্যায়ের পাইকারী ব্যবসায়ীরা জানান, যারা মোকাম থেকে পেঁয়াজ সংগ্রহ করেন, তারা যদি বেশি দামে কিনেন, তাহলে অল্প লাভ করে হলেও তাদেরকেও বেশি দামেই বিক্রি করতে হয়। আর ছামিদুল, শহিদুল, সোলাইমানসহ অনেক খুচরা ব্যবসায়ী জানান, তাদের মূলধন কম, তাই তারা স্থানীয় পাইকারদের কাছে বেশি দামে কিনে নিয়ে, ভোক্তাদের কাছে কিছু লাভে বিক্রি করেন। ফলে পেঁয়াজ আমদানী থেকে শুরু করে কয়েক হাত বদলী হয়ে ভোক্তাদের কাছে পৌঁছায়, তাই শুধু পেঁয়াজ কেন? সকল পণ্যই ভোক্তাদের বেশি দামে কিনতে হয়। তবে মোকামের মালিকরা তাদের ক্রয় মূল্যের চেয়ে অনেক বেশি দামে জেলা-উপজেলা পর্যায়ের পাইকারদের কাছে বিক্রি করেন। তাই ভোক্তাদের হাত পর্যন্ত পৌঁছাতে সকল পণ্যের দাম অনেকাংশে বেড়ে যায়।
ভ‚রদী কৃষিপণ্য উৎপাদক কল্যাণ সংস্থার সভাপতি আলহাজ্ব মো. ছাইদুল হক জানান, তাদের সংস্থার সকল কৃষক পেঁয়াজ চাষ করেছেন। বিক্রি করতে না পরলেও, তাদের কিনতে হবে না। তাই সকল কৃষক ভাইদের পেঁয়াজ, রসুন, আদা, মরিচ, হলুদসহ মসলা জাতীয় ফসলের চাষ করা উচিত। এতেকরে অন্য দেশের উপর নির্ভরশীলতা কমবে। তাতে বাড়বে কৃষি আয়। সমবৃদ্ধি হবে কৃষি অর্থনীতি। স্বাবলম্বী হবে বাংলার সকল কৃষি পরিবার।
কৃষি স¤প্রসারণ অধিদপ্তরের (ডিএই) এর এক তথ্য মতে, ২০১৮-২০১৯ অর্থবছরে দেশে পেঁয়াজ উৎপাদন হয় ২৩ লাখ ৩০ হাজার টন। চাহিদার ৬০ শতাংশ মেটানো হয় দেশে উৎপাদিত পেঁয়াজ দিয়েই। বাকি ৪০ শতাংশ চাহিদা মেটাতে বিভিন্ন দেশ থেকে পেঁয়াজ আমদানি করতে হয়। দেশের ফরিদপুর, মাদারীপুর, ঝিনাইদহ, কুষ্টিয়া, পাবনা, সিরাজগঞ্জ, নীলফামারী জেলা গুলোতে মূলত পেঁয়াজ বেশি উৎপাদন হয়। তাছাড়া দেশের দো-আঁশ মাটির প্রায় এলাকাতেই কম বেশি পেঁয়াজ উৎপাদন হয়। আশার বিষয় হলো শেরপুরের নকলা উপজেলার মাটি পেঁয়াজ চাষের জন্য বেশ উপযোগী হওয়ায় এবং প্রায় সব এলাকার কৃষকরা কম-বেশি পেঁয়াজ চাষ করায়, খুব বেশি পেঁয়াজ আমদানী করতে হয়নি।
উপজেলা কৃষি অফিসার কৃষিবিদ পরেশ চন্দ্র দাশ জানান, নকলার মাটি পেঁয়াজ চাষের উপযোগী হওয়ায় প্রায় সকল কৃষক কম-বেশি পেঁয়াজ আবাদ করেন। এবছর অল্প শ্রমে ও ব্যয়ে পেঁয়াজের দাম বেশি পাওয়ায় চাষীরা পেঁয়াজ চাষের দিকে ঝুঁকে পড়েছেন। কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগ থেকে মাঠ পর্যায়ে কৃষকদের প্রশিক্ষণ, প্রণোদনা ও নিয়মিত পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে বলে তিনি জানান। কৃষিবিদ পরেশ চন্দ্র দাশ বলেন, নকলায় দো-আঁশ মাটির এলাকার যে কেউ চাইলে পেঁয়াজ চাষ করে স্বাবলম্বী হতে পারেন।