অস্ট্রেলিয়ার ৯ বছরের শিশু কোয়াডেন। শারীরিক প্রতিবন্ধকতার কারণে স্কুলে হাসি-ঠাট্টার মুখে পড়তে হয় তাকে। সহপাঠীরা তাকে ‘বামন’ বলে খ্যাপায়, রীতিমত চালায় নিপীড়ন। বুলিং বা টিটকিরির শিকার শিশুটি কান্নায় ভেঙে পড়ে তার মাকে জানায় সে এভাবে বেঁচে থাকতে চায় না।
এমন একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে পোস্ট করেন তার মা ইয়ারাকা বেলিস। প্রায় ৭ মিনিটের ওই ভিডিওতে কোয়াডেন কেঁদে কেঁদে বলছিল, ‘আমাকে একটা দড়ি দাও, আমি আর বেঁচে থাকতে চাই না। ছুরির আঘাতে ক্ষতবিক্ষত করব। আমি চাই কেউ আমাকে মেরে ফেলুক!’
ভিডিওতে বেলিস বলেন, ‘মা হিসেবে আমি ব্যর্থ! আমার মনে হয় শিক্ষাব্যবস্থাও ব্যর্থ।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমি কোয়াডেনকে স্কুলে আনতে গিয়ে দেখি এক সহপাঠী তার উচ্চতা নিয়ে হাসি-ঠাট্টা করছে। ওকে শাসাচ্ছে। আমাকে দেখেই ও আতঙ্কে গাড়ির দিকে ছুটে আসে। ও চায়নি আমি ভরা স্কুলে সেই সহপাঠীকে কিছু বলি। তারপরেই গাড়িতে উঠে কাঁদতে শুরু করে।’
ওই ভিডিওতে মায়ের আবেদন, ‘আমি প্রত্যেক অভিভাবকদের অনুরোধ করছি দেখুন স্কুলে নিপীড়নের ফলে কী অবস্থা হয়। আমার মতো অনেক মায়ের সন্তান, যারা শারীরিকভাবে পিছিয়ে এমন নিপীড়নের শিকার হচ্ছে। তাই অনুরোধ করছি আপনাদের সন্তানদের শিক্ষা দিন, কার সঙ্গে কেমন আচরণ করা উচিত। নয়তো কোয়াডেনের মতো অন্যরাও আত্মহত্যাপ্রবণ হয়ে উঠবে।’
তিনি দাবি করেছেন, ‘প্রতিবন্ধকতা সম্বন্ধে সচেতন করতে স্কুলে বিশেষ পাঠ্যক্রম চালু করা হোক। একবার একটু ভেবে দেখুন সেই পরিবারগুলোর অবস্থা, যাদের সন্তান আমার কোয়াডেনের মতোই শারীরিকভাবে পিছিয়ে।’
বিবিসি অনলাইনের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, এ ঘটনায় অস্ট্রেলিয়ার ওই শিশুর পক্ষে তহবিল গঠন করা শুরু হয়েছে। কোয়াডেনকে ডিজনিল্যান্ডে পাঠানোর জন্য ইন্টারনেটের দুনিয়ায় তহবিল গঠনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। গোফান্ডমি নামে ওই পেজে মোট ১০ হাজার ডলার সংগ্রহের লক্ষ্য ঠিক করা হয়েছিল। এরই মধ্যে তাতে তিন লাখ ডলারের মতো উঠে গেছে।
এ ছাড়া সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে বুলিংয়ের প্রতিবাদে সরব হয়েছেন অস্ট্রেলিয়ার বিভিন্ন তারকা ব্যক্তিত্ব। কোয়াডেনের পক্ষে অভিনেতা হিউ জ্যাকম্যান একটি ভিডিওবার্তা পোস্ট করেছেন। এতে তিনি বলেছেন, ‘কোয়াডেন, তুমি অন্য অনেকের চেয়ে ঢের বেশি শক্তিশালী।’ একই সঙ্গে সবার প্রতি সদয় হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।
বেলিসের এই আবেদনের সমর্থনে এগিয়ে এসেছে একাধিক স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন। টুইটারে হ্যাশট্যাগ কোয়াডেন ব্যানারে চলছে সচেতনতার প্রচার। অস্ট্রেলিয়ার জাতীয় রাগবি দলও সেই খুদের সমর্থনে এগিয়ে এসে বেলিসের ভিডিওতে সহমর্মিতা জানিয়েছে। এ ছাড়া মনরোগ বিশেষজ্ঞরাও ওই ভিডিও দেখে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে।