রক্ত জমাট বাঁধা: করোনায় মৃত্যুর নতুন কারণ

ডাঃ রাজীব কুমার সাহা

পঞ্চাশ বয়সের একজন ভদ্রলোক হাসপাতালে ভর্তি হন কভিড ১৯ পজিটিভ নিয়ে। ভর্তির সময় থেকেই কাশি এবং জ্বর ছিলো। তার এক্সরে করে দেখা গেলো দুই ফুসফুসই নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত। রোগীকে অক্সিজেন দেয়া হলো। সাথে এন্টিবায়োটিক এবং এন্টিভাইরাল মেডিসিন। ধীরে ধীরে উন্নতি হচ্ছিলো  রোগীটির। জ্বর কাশি কমতে শুরু করলো। হঠাৎ করেই একদিন রোগীটির প্রচন্ড শ্বাসকষ্ট শুরু হলো। নার্স দ্রুত অক্সিজেন বাড়িয়ে দিলেন এবং কর্তব্যরত চিকিৎসকে খবর পাঠালেন।

চিকিৎসক এসে দেখলেন রোগীর অনেক শ্বাসকষ্ট হচ্ছে। জিহবা নীল হয়ে গেছে। অক্সিজেন সেচুরেশন ৪৮% এ নেমে এসেছে। তিনিও অক্সিজেনের পরিমান বাড়িয়ে দিলেন। আর কিছু করার আগেই লক্ষ্য করলেন রোগীটি মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েছেন। চিকিৎসকের একটিই চিন্তা মাথায় ঘুরছিলো রোগীটির হঠাৎ এত শ্বাসকষ্ট এর কারণ কি ছিলো?

মৃত ব্যাক্তির পোস্ট মর্টেম রিপোর্ট এলো। যাতে পাওয়া গেলো ফুসফুসের মধ্যে রক্ত জমাট বাঁধার কারণে রোগীটির মৃত্যু হয়েছে। মেডিকেলের ভাষায় Massive Pulmonary Embolism.

কভিড ১৯ আক্রান্ত অনেক রোগীদের রক্ত জমাট বাঁধা  জটিলতা দেখা যাচ্ছে। ইউরোপীয় গবেষণায় দেখা গেছে, হাসপাতালে ভর্তি হওয়া জটিল কভিড-১৯ রোগীদের মধ্যে এক তৃতীয়াংশ রোগী রক্ত জমাট বাঁধা  জটিলতায় আক্রান্ত হয়েছেন। পোস্ট মর্টেম রিপোর্টে দেখা গেছে এদের ফুসফুসে অনেক ছোট ছোট রক্তের  জমাট বাঁধা। কভিড-১৯ রোগীদের মৃত্যুর একটি অন্যতম কারণ হলো Pulmonary Embolism.

কভিড-১৯ রোগীদের রক্ত নালীর প্রদাহের ফলে রক্তের কনিকা এবং কিছু কেমিক্যাল মিলে তৈরি হয় Blood clot. এই জমাট বাঁধা  রক্ত, রক্তনালির মাধ্যমে শরীরের বিভিন্ন অংগে পৌছিয়ে থাকে এবং সেখানকার রক্ত চলাচলের বাধার সৃষ্টি করে থাকে। ফুসফুসের রক্ত চলাচলের বাধার সৃষ্টি করলে আমরা এটাকে বলি Pulmonary embolism. এতে করে ফুসফুসের অক্সিজেন চলাচলে বাধাগ্রস্ত হয়ে থাকে। এরফলে রোগীদের প্রচন্ড শ্বাসকষ্ট শুরু হয়। যে পাশে রক্ত চলাচলের বাধা পায় সে পাশে তীব্র বুকের  ব্যাথা হয়ে থাকে।

আমরা CT Pulmonary angiogram করে এই রোগ নির্নয় করতে পারি। তাছাড়া D-dimer, ECG, CXR পরীক্ষার মাধ্যমেও ধারনা পেতে পারি। এই জমাট বাধা রক্তের পরিমান যদি অনেক বড় হয় তবে রোগীর হঠাৎ করেই মৃত্যু হতে পারে। কভিড ১৯ এ আক্রান্ত রোগীদের এই রক্ত জমাট বাধার জটিলতার ফলে হার্ট অ্যাটাক এবং স্টোকের ঝুঁকিও বাড়াতে দেখা গিয়েছে।

তাই করোনা চিকিৎসায় এন্টি কগোলেন্ট একটি নতুন মাত্রা যোগ করেছে। বিভিন্ন দেশের গবেষণায় দেখা গেছে যে,  যেসকল রোগীদের এন্টি কগোলেন্ট দিয়ে চিকিৎসা করা হয়েছে তাদের মৃত্যুর হার, যাদের এই মেডিসিন দেওয়া হয়নি তাদের থেকে কম। অর্থাৎ এন্টি কগোলেন্ট মেডিসিন প্রয়োগের মাধ্যমে রক্ত জমাট বাঁধা  রোধ করে করোনা রোগীদের মৃত্যুর হার কমানো সম্ভব।

এন্টি কগোলেন্ট মেডিসিন অনেক ধরনের হয়ে থাকে। এদের মধ্যে Low Molecular weight  Heparin (LMWH) এর ব্যাবহার করা হয়েছে বিভিন্ন দেশের গবেষণায়। আমাদের দেশের গাইড লাইনেও এই মেডিসিনের  ব্যাবহার সংযুক্ত করা হয়েছে। করোনা বিরোধী যুদ্ধে এই মেডিসিন আমাদের হাতিয়ার হিসেবে কাজ করবে বলে আশা করছি।

সবশেষে বলবো করোনা মোকাবিলায় আমাদের সবাইকে সচেতন হতে হবে। করোনা সংক্রমণ রোধে সবাইকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে। মনে রাখতে হবে করোনার সংক্রমণ প্রতিরোধই হলো এই মহামারি থেকে মুক্তির একমাত্র রাস্তা।।

পরামর্শ দিয়েছেন- ডাঃ রাজীব কুমার সাহা,
এমবিবিএস, এম আর সি পি(লন্ডন),
এমসিপিএস (মেডিসিন), এমডি(চেষ্ট)
মেডিসিন ও বক্ষব্যাধি বিশেষজ্ঞ
কনসালট্যান্ট, করোনা ইউনিট,
মহানগর জেনারেল হাসপাতাল, ঢাকা।


বাঙালির মুক্তির সনদ ৬ দফা
৭ই জুন ৬-দফা দিবস হিসেবে আমরা পালন করি। ২০২০ সাল
বিস্তারিত
মোহিত কামালের টুকরো গল্প ‘উপকার’
একা একা ঘাস আর গাছের  কচি কচি লতাপাতা খাচ্ছিল জেব্রা।
বিস্তারিত
তামাক ও নিকোটিন থেকে তরুণদের
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ঘোষিত বিশ্ব তামাক মুক্ত দিবস আজ ৩১
বিস্তারিত
উন্নয়ন আর পরিবেশ রক্ষা, দুটি
উন্নয়ন আর পরিবেশ রক্ষা- দুটি কি একই সাথে সম্ভব? যদি
বিস্তারিত
করোনা প্রতিরোধে অন্তরের অসুখ নিরাময়
মানুষের অসুস্থতা প্রধানত দুই প্রকার, শারীরিক ও মানসিক। বিশ্বস্বাস্থ সংস্থা
বিস্তারিত
আমাদের চার পাশে হাজারো দু’পায়ের
আপনি পবিত্র রমজান মাসে কতজন লোককে সাহায্য করেছেন? একজন? দুইজন?
বিস্তারিত