করোনায় আত্মশুদ্ধি অনুধাবন ও অনুশোচনা

করোনার ভয়াবহতা এখন বিশ্বজুড়ে। সারা বিশ্ব এক মৃত্যুপুরিতে পরিণত হয়েছে। প্রতি মুহূর্তে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত ও মৃত্যুর সংখ্যা বেড়েই চলছে। পৃথিবীর দুর্গম অঞ্চলের কয়েকটি দেশ বাদে আর কোনো দেশ বা অঞ্চল এই মহামারি থেকে বাদ আছে বলে মনে হয় না। ওয়ার্ল্ডোমিটার সূত্রমতে গত ৭ এপ্রিল মঙ্গলবার পর্যন্ত মোট আক্রান্ত সংখ্যা ১৪,১০,০৯৫ এবং মোট মৃত্যু ৮১,০১০। আক্রান্ত দেশ ২০৯।

করোনাভাইরাসের তান্ডবতার কথা এখন আর কারো অজানা নয়। পৃথিবীর সর্বস্থানে মানুষ আতঙ্কগ্রস্থ। ঘরে বসে সবাই বন্দি জীবন কাটাচ্ছে। কোথাও কোলাহল নেই। কেবল নিস্তব্ধতা আর শুনসান অবস্থা বিরাজ করছে সারা বিশ্বময়। কভিড-১৯ এই প্রাণঘাতী ভাইরাসের ছোবল থেকে পৃথিবীর মানুষ কখন নিস্কৃতি পাবে তা কেউ বলতে পারছে না। আমার মনে হয় এই অজানা মহামারীর বিস্তার এবং এর উৎপত্তি নিয়ে অনুধাবন ও গবেষণার প্রয়োজন রয়েছে। এ কথা অনস্বীকার্য যে শত বছর কিংবা হাজার বছর আগের পৃথিবী আর আজকের পৃথিবী এক নয়। অল্পকথায় বলতে গেলে শিক্ষাধীক্ষা গবেষণায় বিশ্ব অনেক এগিয়েছে।  কোন কোন উন্নত দেশ তাদের জ্ঞান গরিমায় আবিস্কার করতে সক্ষম হয়েছে অনেক দুঃসাধ্য ও জটিল বিষয়। পৌঁছে গেছে উন্নতির শিখরে। উন্নত বিশ্বের দিকে তাকালে তা সহজেই বুঝা যায়। 

মানুষের মৌলিক চাহিদার মধ্যে খাদ্য বস্ত্র শিক্ষা বাসস্থান স্বাস্থ্য এবং নিরাপত্তা সবকিছুর আগে। এ দিক থেকেও মানুষ পিছিয়ে নেই। দিনের পর দিন আরো উন্নতি লাভ করেছে। আবিস্কারের ফলে মানুষ পৃথিবী ছেড়ে ভিন্ন গ্রহে পাড়ি জমাচ্ছে। চেষ্টা চলছে গ্রহ থেকে গ্রহে যেতে। এবং তা যত দ্রæত যাওয়া যায়। পৃথিবী ছেড়ে ভিন্ন গ্রহে ছুটে চলার উদ্দেশ শুধুমাত্র ভ্রমন নয়। সেখানে কি আছে কত মহা মূল্যবান ধন রতœ আছে তা জানার জন্য এবং আহরণের জন্যও বটে। সে সম্পদ যদি হয় পৃথিবীর সম্পদের চেয়ে হাজার গুনে মূল্যবান তা হলে তো কথাই নেই। অজানা সে সব ধন সম্পদের মালিক হওয়ার ইচ্ছায় উন্নত বিশ্বের মহাজনরা কার আগে কে সেখানে যাবে সে চেষ্টায় মহা ব্যস্ত। মূল্যবান সম্পদ আহরণের লিপ্সায় আরামের ঘুম হারাম করছে। যে যত আগে সম্পদ আহরণ করে দেখাতে পারবে সে তত ক্ষমতাবান। আর এই ক্ষমতার প্রতিযোগিতা করেই যাচ্ছে। প্রতিযোগিতায় উত্তীর্ণ হতে পারলে অন্যকে বলতে পারবে দেখ বেটা! তোর চেয়ে আমিই প্রথম এ গ্রহে চলে এসেছি। আমার শক্তি মহাশক্তি যার তুলনা হয় না। আর কিছু না হোক চন্দ্র জয় করে তার পৃষ্ঠ থেকে কয়েক টুকরা শিলা আর এক মুষ্টি মাটি তো এনেছি? এখন থেকে ঐসব গ্রহে হরহামেশা যাওয়া আসা করবো। প্রয়োজনে সেখানে আবাসস্থল গড়ে তুলবো। দখল করে নেবো ইচ্ছামত জায়গা জমি। দাবি করবো ঐ গ্রহ আমার। তবে সাবধান! ওখানে কেউ যাওয়ার চেষ্টাও করবে না। আর যদি চেষ্টা করা হয় তবে আমি আমার সৈন্যবাহিনী গোলাবারুদ কামান বন্দুক সাবমেরীন বোমারু বিমান বিষাক্ত গ্যাস পারমাণবিক বোমা সুপার সনিক জেট ফাইটার দুরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র এমনকি যুদ্ধ জাহাজ ভর্তি করে ট্যাঙ্ক বাহিনী নিয়ে যুদ্ধ ঘোষণা করে ঝাপিয়ে পড়বো তোদের উপর। শায়েস্তা করে দেখিয়ে দেবো আমার গ্রহ সীমানায় যাওয়ার সাধ। এই পৃথিবীতে আমি যে মহাশক্তিধর তা কি তোদের বলে দিতে হবে? আরো শুনে রাখ! কেবল আমিই নই আমার সাথে আছে বিশ্বের আরো শক্তিধর রাষ্ট্রের সেনাপতিরা। এ বিশ্বে যত তেল গ্যাস পানি খনিজ সম্পদ যা যা কিছু পৃথিবীতে আছে সব দখল করে নেবো এক এক করে। এতোকাল এ সব সম্পদস্থল তোদের কাছে ইজারা দিয়েছি মাত্র। চাহিবা মাত্র দিতে বাধ্য থাকবি। অন্যথায় জেনে রাখ! ঐ যে সেদিন ওদেরকে গর্ত থেকে ধরে এনে দুনিয়া থেকে সরিয়ে দিয়েছি? আমিই বিশ্বের সেই মহাশক্তিধর কর্তাব্যক্তি। পরমানু রাজ্যের রাজা। যুদ্ধ আমার নেশা আর অস্ত্র বিক্রি আমার পেশা। আমি যাকে ইচ্ছা উঠাই যাকে ইচ্ছা ডুবাই। এটা আমার খেলা। দ্বিতীয় প্রসংগে যাওয়ার আগে বলে নিতে চাই করোনাভাইরাস দিয়ে শুরু করেছি করোনা দিয়েই শেষ করবো। প্রসঙ্গটি হলো মাখ্লুকাত নিয়ে। ইসলাম ও পবিত্র কোরআন সুন্নাহ্ মতে এই দুনিয়াতে আঠারো হাজার মাখ্লুকাত আছে। আর এই আঠারো হাজার মাখ্লুকাতের মধ্যে মানুষ হলো শ্রেষ্ঠ মাখ্লুকাত অর্থাৎ শ্রেষ্ঠ জীব। অন্যান্য ধর্মালম্বীদের মতে কোন সৃষ্ট জীবকে তারা শ্রেষ্ঠ বলে বিশ্বাস করে সেটা তাদের ব্যাপার। আমি একজন মুসলমান ধর্মালম্বী হিসেবে ছোটবেলা থেকেই শুনে আসছি পৃথিবীর সকল মানুষ ধর্ম বর্ণ নির্বিশেষে সৃষ্টির সেরা জীব। 

১৯৮৩ সনে শেফা ওয়েলফেয়ার ট্রাষ্টে কিছুদিন ম্যানেজার পদে ও আলফুরক্বান মাসিক ইসলামিক পত্রিকা প্রকাশের শুরুতে সহকারী সম্পাদক পদে চাকুরিরত ছিলাম। জনাব এম আতিকুল হক (প্রয়াতঃ), সিলেট জেলার জালালপুরে তার জন্ম। বাংলাদেশ ব্যাংকে ডাইরেক্টর (পাবলিকেশনস) পদে কিছুকাল কর্মরত ছিলেন। তিনি ইসলামিক স্কলার। পাকিস্তানের পাঞ্জাব ইউনিভর্সিটি থেকে জার্নালিজমে গোল্ড মেডেলিষ্ট, ইংলিশে ডাবল এম এ, ভিজিটিং প্রফেসর এবং শেফা ওয়েলফেয়ার ট্রাষ্ট এর প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যন ছিলেন। আলফুরক্বান মাসিক ইসলামিক পত্রিকারও প্রতিষ্ঠাতা সম্পাদক ছিলেন। তিনি ইসলামিক গবেষক ও লেখক হিসেবে প্রচুর বই লিখেছেন। তার সমস্ত বই ইংরেজী ভাষায় লেখা। লন্ডন থেকে তার অনেক বই প্রকাশিত হয়েছে। চাকুরির সুবাদে আমার এই ইসলামিক চিন্তাবিদ ধার্মিক ও স্কলার ব্যক্তির সান্বিধ্যে আসার সৌভাগ্য হয়েছিলো। তার লেখা অসংখ্য বই মধ্যপ্রাচ্যে কাতারের সম্মানিত ব্যক্তিদেরকে ও সেখানে কর্মরত মিসরের উচ্চ পদস্থ লোককে উপহার দিয়েছি। এদের কাছ থেকে আর্থিক অনুদান সংগ্রহ করে ট্রাষ্টের ফান্ডে জমা করার জন্য জনাব আতিকুল হক সাহেবের নিকট পৌঁছে দিয়েছি। 

দেশের একজন খ্যাতিমান মাওলানা মহিউদ্দিন খান (প্রয়াতঃ)। আল-মদিনা পাবলিকেশনস এর মালিক ছিলেন। পবিত্র কোরআনুল করীম এর সংক্ষিপ্ত তফসীর বাংলা ভাষায় অনুবাদ ও সম্পাদনা করেছেন। তিনি ট্রাষ্টের একজন ট্রাষ্টি থাকার সুবাদে তার সাথে আমার পরিচয় ও ঘনিষ্ঠতা ছিলো। ইসলামিক ধ্যান ধারণা ও গবেষণালব্দ অনেক কিছু নিয়ে জনাব আতিকুল হক আমার সাথে আলাপ আলোচনা করতেন। ইংরেজিতে তার হাতে লেখা পান্ডুলিপি আমি নিজ হাতে কম্পোজ করে দিতাম। ইসলামিক চিন্তা চেতনায় আমি তাকে একজন আদর্শবান মনে করি। তার থেকে পবিত্র কোরআনের কিছুটা হলেও মৌলিক ধ্যান ধারণা পেয়েছি। তিনি কোরআন ও সুন্নাহর আলোকে পারিবারিক জীবন থেকে শুরু করে সর্বক্ষেত্রে কঠিন সাধনাব্রত ছিলেন। তিনি বলতেন- দেখুন মানুষ সৃষ্টির সেরা জীব (ঝঁঢ়বৎরড়ৎ ঈরৎবধঃঁৎব) হিসেবে মহান আল্লাহ্ ঘোষণা করেছেন। এবং এই সেরা জীব মানুষের জন্যই আবার এতো বড় কঠিন শাসনতন্ত্র আল কোরআন নাযিল করেছেন। এর ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে তিনি বলেছেন পৃথিবীর আর কোন প্রাণী বা মাখ্লুকাতের জন্য এতো কঠিন করে কোন শাসনতন্ত্র নাযিল করেন নাই। মানুষের সম্মান সর্বোচ্চ এবং তারপর বাকি সব সৃষ্ট জীবের অবস্থান। এরা মানুষের মত করে আল্লাহ্র প্রতি এবাদত ও পাক পবিত্রভাবে উত্তম কাজ করতে সক্ষম নয়। 

কোরআনের বিধানমতে আল্লাহ্র প্রতি এবাদতসহ সকল কর্ম করাই মানুষের অবশ্য কর্তব্য। মানুষ আল্লাহ্র নির্দেশ আর কোরআনের আলোকে যেভাবে উত্তমরূপে কাজ করবে মাখ্লুকাতের অন্যান্য জীবের পক্ষে তা সহজে সম্ভব নয়। আর এ কারণেই মানব জাতিকে সকল মাখ্লুকাতের শ্রেষ্ঠ জীব বলা হয়েছে। কিন্তু বাস্তবে আমরা কি দেখতে পাই। মানুষ সৃষ্টির সেরা জীব হয়েও কোন কোন মানুষ যে অন্যায় অবিচার জুলুম অত্যাচার পাপ (গুনাহ) কাজ করে তা যেনো বন্য পশুকেও হার মানায়। কিছু মানুষের কান্ডকীর্তি কিংবা কুকর্ম দেখে বন্য প্রাণী পর্যন্ত লজ্জা পায়। পৃথিবীতে বহু মানুষ জঘন্য ধরনের খারাপ কাজ করে যাচ্ছে। নিয়ম বহির্ভূত আল্লাহ্ বিরোধী কাজে লিপ্ত আছে। মানবকুলের মধ্যে কিছু মানুষ এমন এমন হিং¯্র কাজ করে যা পশুর মধ্যেও দেখা যায় না। মানুষের দ্বারা এসব গুনাহর কাজ হবে তা আল্লাহ্পাক আগেই জানতেন। আর সে কারণেই মানুষ (ইনসান) শ্রেষ্ঠ জীবের দাবীদার হলেও তাদেরকে হেদায়েত করার জন্য এতো কঠিন শাসনতন্ত্র আল কোরআন নাযিল করেছেন। এমন কঠিন শাসনতন্ত্র গাইড লাইন অন্য কারো জন্য করেন নাই। তিনি এই ব্যাখ্যা দেওয়ার পরে আমি আপাদমস্তকে বিশ্বাস করেছিলাম। পৃথিবীর কোন কোন মানুষের কর্মকান্ডের প্রতি খেয়াল করলে দেখা যাবে যে, কিছু মানুষ যে কত ভয়ানক কাজ করতে পারে তা ভাবতেও অবাক লাগে। তবে খারাপ কাজের বিস্তার দিনের পর দিন বেড়েই চলেছে । রীতিমত অনৈতিক কাজের প্রতিযোগিতা লাগামহীনভাবে চর্চা হচ্ছে। মনে হয় সংস্কৃতিতে পরিণত হয়েছে। অন্যায় অবিচার দুর্নীতি নানা রকমের অবৈধ কাজ থেকে কিছুতেই ফেরানো যাচ্ছে না। অর্থলোভ রাজনৈতিক প্রতিহিংসা নারী আকর্ষণ স্বার্থ হাসিলে নির্বিচারে মানুষ মানুষকে অত্যাচার করছে। মানুষকে মানুষ হত্যা করছে। একে অপরের প্রতি অবিচার করছে। একে অপরের অধিকার হরণ করছে। মানুষ মানুষের স্বাধীনতা খর্ব করছে। পুরুষ নারীকে নির্যাতন করছে। কোথাও নারী পুরুষকে নির্যাতন করছে। মানুষ অপহৃত হচ্ছে। নারী ধর্ষিত হচ্ছে। শিশুকে ধর্ষণ করছে। পুরুষেরা নারীদের উপর প্রভাব খাটাচ্ছে। বেশী অধিকার আদায় করছে। শিক্ষিত লোকেরা দুর্নীতি করছে। ঘুষ খাচ্ছে। মুনাফাখোরেরা অতি মুনাফা করছে। সাধারণ ক্রেতাকে ঠকাচ্ছে। করোনাভাইরাস এক হাত ধরে এমন কাউকে টানছে অন্যহাতে মুনাফাখোর ক্রেতার কাছ থেকে সুযোগবুঝে জিনিষের দাম বাড়িয়ে নিচ্ছে। করোনা পরিস্থিতির সুযোগে অসাধু ব্যবসায়ী মজুদ করছে। বয়ানকারীরা এক হাত উঁচু করে হাসি তামাশায় বয়ান দিচ্ছে আর অন্য হাতে টাকা নিচ্ছে। মানুষকে দৈনন্দিন জীবনের শিক্ষা শৃঙ্খলা শিষ্টাচারের আদেশ উপদেশ না দিয়ে নিজেদের স্বার্থে সাধারণ মানুষকে ধর্মের ভয় এবং লোভ দেখিয়ে কিচ্ছা শুনাচ্ছে। আদর্শ নাগরিক হওয়ার বাস্তব শৃঙ্খলা ও গুনাবলির উপর তেমন বক্তব্য শোনা যায় না। করোনাভাইরাসের কারণে মসজিদ থেকে মাইক ফুকিয়ে বলা হচ্ছে সর্দি কাশি নিয়ে কেউ মসজিদে আসবেন না। অথচ এমন শিষ্টাচারের সুন্দর উপদেশ এর আগেও নিয়মিত দেওয়া উচিৎ ছিলো। নিয়মিতভাবে মানুষ এ ধরণের উপদেশ পেলে রাস্তা ঘাটে যেখানে সেখানে এমনকি চলন্ত বাস কিংবা যানবাহন থেকে কফ থুতু ফেলার মত নোংরা কাজ থেকে অনেকটাই বিরত থাকতো। পবিত্র স্থানেও ব্যভিচার হচ্ছে। সৌদি আরবে নারীরা খাদ্দামার কাজ করতে গেলে সেখানে তাকে দিয়ে সে কাজ না করিয়ে কোন কোন কফিলরা খাদ্দামাকে (গৃহ-পরিচারিকা) নির্যাতন করছে। ধর্ষণ করছে। মেরে ফেলছে। চাকুরিতে উচিৎ পয়সা দিচ্ছে না। ঠকাচ্ছে।

ভোগবিলাসে পৃথিবীর অনেক মানুষ উন্মাদ হয়ে পড়েছে। কে কারটা ছিনিয়ে নিয়ে নিজের পেট ভরবে সে চেষ্টায় আছে। প্রতারণার স্বীকার হয়ে অনেকে অনেক কিছু হারাচ্ছে। ব্যাংক লুট করছে। জমি দখল করছে। জুয়া খেলছে। দুর্নীতি করছে। লোভে পড়ে দেহ বিলাচ্ছে। অন্যায় অবিচার জুলুম করছে। বড় বড় রাষ্ট্র ছোট ছোট রাষ্ট্রকে চাপের মুখে রাখছে। বড় ক্ষমতাধর অপেক্ষাকৃত কম ক্ষমতাবান রাষ্ট্রের সম্পদ দখল করছে। না দিলে যুদ্ধ করছে। যুদ্ধে বড় বড় বোমারু বিমান ব্যবহার করছে। এক দেশ থেকে অপর দেশে দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়ছে। গোলাবারুদের গন্ধে বাতাস ভারি করছে। সাধারণ নিরীহ নারী পুরুষ নিধন করছে। নিরপরাধ কোলের শিশুকে হত্যা করছে। সাগরে ফেলে দিচ্ছে। শিশুর লাশ সাগরে ভেসে কুলে গিয়ে ঠেকছে। মহাশক্তিধর মহারাজা, সেনাপতি, রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী মারাত্মক মারাণাস্ত্র তৈরী করার অর্ডার দিচ্ছে। তৈরী হলে ক্ষমতার দাপটে সেগুলি বিশ্ববাসীকে দেখিয়ে ভয় দেখাচ্ছে। পৃথিবীর সর্ববৃহৎ রণতরি জঙ্গিবিমান ভর্তি করে মহাসাগরে দাপিয়ে বেড়াচ্ছে। আনবিক বোমার ভয় দেখাচ্ছে। দেশ থেকে জোর করে লাখ লাখ মানুষ সাগরে ভাসিয়ে দিচ্ছে। গুলি করে রক্তে সাগরের পানি লাল করছে। ঘরবাড়ি জ্বালিয়ে দিচ্ছে। রণক্ষেত্র তৈরী করে সব তছনছ করছে। ভিন্ন দেশের মালিকদেরকে মাটির গর্ত থেকে ধরে এনে হত্যা করে উল্লাস করছে। শক্তিধর কর্তাব্যক্তিরা মোড়লীভাব নিয়ে সাধারণ মানুষকে অবহেলা করছে। ক্ষমতার জোরে অপেক্ষাকৃত কমশক্তিধর প্রতিবেশী রাষ্ট্রকে হুমকি দিচ্ছে। কিশোরীকে বিনা দোষে গুলি করে কাটা তারে ঝুলাচ্ছে। এসব দেখে শুনে করোনাভাইরাস কি বলছে শুনি। সে বলছে- তোরা পারিস আমি পারি না? আমি তোদের চেয়েও মহাশক্তিধর! আমি যখন ছিলাম না তখনও তোরা কতভাবেই মানুষ হত্যা করেছো। যুদ্ধ চালিয়ে কত নিরীহ মানুষকে এখনো মারছো। তোরা যে ভালো তা কি বুকে হাত দিয়ে একবার বলতে পারবি? করোনার এসব কথা শুনলে কি বুঝা যায়? 

উপর বর্ণিত সকল কিছু দেখে মনে হয় করোনা খ্যাপে গেছে। সে এতদিন কোথায় ছিলো? সে কি উর্ধ্বাকাশ থেকে নেমে এসেছে? নাকি পৃথিবীর মাটিতেই করোনাভাইরাসের জন্ম হয়েছে? করোনাভাইরাস কি নিজে নিজেই জন্ম নিয়েছে? নাকি এই প্রাণঘাতী রোগকে কেউ সৃষ্টি করেছে? প্রশ্ন জাগতেই পারে। এর পেছনে কি এমন কোন প্রভু আছে? সে কার নির্দেশ পালন করছে? করোনার তান্ডবতা দেখে এমনটা মনে হওয়া অমূলক নয়। মাত্র কিছু দিনেই এই প্রাণঘাতী ভাইরাস (কভিড-১৯) তার সক্ষমতা দেখাতে পেরেছে। পৃথিবীর শুধু সাধারণ মানুষই নয় পরাশক্তিধরদেরকেও সে ধরাশায়ী করতে সক্ষম। রাজা রাণী ধনী গরিব সাদা কালো তার কাছে সব সমান। এইতো সেদিন বাকিংহাম প্রাসাদে বীরদর্পে ঢুকে রানী এলিজাবেথের গায়ে ছোঁয়া দিয়ে তাঁকে প্রাসাদ ছাড়া করেছে। শুধু তাই নয় রাজপরিবারে রানীর ছেলে চার্লস প্রিন্স অব ওয়েলসের সাথেও সাক্ষাৎ ঘটিয়েছে করোনাভাইরাস কভিড-১৯। কিভাবে ঢুকে পড়লো তা কেউ টের করতে পারেনি। এতোসব সৈন্য থাকা সত্তে¡ও কারো গায়ে ধাক্কা লাগেনি। কোনো আলোকরশ্মিতে ধরা পড়েনি। প্রসাদের অন্দরমহলে চলে গেলো অতি সহজে। ইংল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রীকেও করোনাভাইরাস ছাড় দেয়নি। আমরা সাধারণ মানুষ। আমাদেরকে ধরা তার জন্য সহজ হলেও করোনাভাইরাস বেছে বেছে রাষ্ট্রপ্রধান হাইপ্রোফাইলদেরকে কেন ধরছে এটা বুঝে আসছে না। শেষ অবধি কাকে ধরার জন্য মাঠ দাবড়িয়ে বেড়াচ্ছে সেটা সে নিজেই জানে। আবার লক্ষ্য করছি কোন এক প্রধানমন্ত্রীকে সে না ধরে তার স্ত্রীকে ছুঁয়ে গেছে যাতে স্বামী নিজের চেয়েও স্ত্রী আক্রান্তে বেশী কষ্ট পায়। করোনাভাইরাস যা বোঝাতে চায় তা আমাদের মত সাধারণ জ্ঞানের মানুষের বোঝার কথা নয়। তবে করোনা যদি মনে করে সারা বিশ্বকে কাবু করে তার প্রভুকে বিশ্বের সুপারপাওয়ার আসনে বসিয়ে গলায় জয়ের মালা পরাবে তাও অসম্ভব কিছু নয়। কারণ বিশ্ব বিবেক দেখতেই পাচ্ছে কে হতে চায় পৃথিবীর সুপার পাওয়ার। আমার কেন জানি মনে হয় করোনাভাইরাস যতটা নিষ্ঠুরতা দেখাচ্ছে তার ভিতর কিছু দয়া থাকলেও থাকতে পারে। সে সময় হলে প্রভুর নির্দেশে বোতলে ঢুকে যাবে ঠিকই তবে তার আগে ক্ষমতার দাপট দেখিয়ে যাবে সবার সম্মুখে। পরবর্তীতে পৃথিবীর কোন ক্ষমতাধর যদি করোনা প্রসংগে তার সৃষ্টিকারী প্রভুর বিপক্ষে শক্ত অবস্থান নেয় এবং প্রভুকে ধ্বংস করার মনস্থে যুদ্ধ ঘোষণা করে কামান দাগায় এটম বোমার ভয় দেখায় সুপার ক্রুজ ফাইটার জেট ব্যবহার করে গ্যাস দিয়ে করোনাসৃষ্টিকারী প্রভুকে ঘায়েল করার চেষ্টা করে সেক্ষেত্র আক্রমনকারীকে তারপূর্বে ঠান্ডা মাথায় আরো একবার ভাবতে হবে এমনটা করা ঠিক হবে কিনা? কারণ এতে কতটা সফল হওয়া যাবে সে প্রশ্ন থেকেই যায়। ধরা গেলো আঘাত করবেই। সেক্ষেত্রে আঘাতের প্রতিঘাত করতে করোনা আদিরূপ পাল্টিয়ে আরো শক্তিশালী নতুনরূপে আবির্ভূত হওয়ার সম্ভাবনা একেবারেই উড়িয়ে দেওয়া যায় না। তাছাড়া করোনার অভিব্যক্তি দেখে প্রতিয়মান হয় কারো হুমকি ধামকি কোন কাজেই আসবে না।  সেক্ষেত্রে হুমকিদাতার দরজায় কড়া নাড়তে পারে নতুনরূপে। ঢুকে পড়তে পারে তার হৃদপিন্ডে। তাছাড়া যেসব অস্ত্র গোলাবারুদের উল্লেখ করা হয়েছে এসব আগ্নেয়াস্ত্র লোহালক্কর দিয়ে স্নায়ুযুদ্ধ প্রতিরোধ করা যাবে না। এসব যন্তপাতি ব্যবহারের দিন প্রায় শেষ। এখন সাইবার শক্তির খেলা। সকল কামান বন্দুক লোহালক্কর ধ্বংস করে ফেলে দেওয়াই ভালো। তবে সাগরে ফেলা যাবে না। কারণ সাগর প্রকৃতির দান। গোলাবারুদ লোহালক্কর ফেলে সাগরের নিটল পানি ঘোলাটে করা আরেকটা অপরাধ। এসবগুলিকে পরিত্যক্ত ঘোষণা করে জ্বালিয়ে পুড়িয়ে মন্ড তৈরী করে নতুন করে মানব কল্যাণে ব্যবহারিক জিনিষপত্র বানানো যেতে পারে। সুন্দর সুন্দর প্রমোদতরী তৈরী করে আনন্দ ভ্রমনে ব্যবহার করা যেতে পারে। পাশাপাশি হিংস্রতা ছেড়ে পৃথিবীজুড়ে মানবতার বিস্তার ঘটানো যেতে পারে। রাজনৈতিক ক্ষেত্রে উদারনীতির চর্চা করতে হবে। ধ্বংসাত্মক পরিকল্পনা ছেড়ে বিশুদ্ধ ধ্যান ধারণায় সম্মিলিত প্রচেষ্টায় সবার জন্য কল্যাণকর নিরাপদ আবাসস্থল হিসেবে পৃথিবীকে বাসযোগ্য করতে হবে। গড়তে হবে মানবতাসমৃদ্ধ এক নতুন বিশ্ব। বুঝতে হবে এই পৃথিবী কারো একা আধিপত্ত বিস্তারের জায়গা নয়। বিশ্ব হতে হবে সকল শান্তিকামী মানুষের জন্য। দূষণ মুক্ত করতে হবে প্রকৃতি পরিবেশ। ধর্ম নিয়ে খেলা তামাশা করা চলবে না। মুখে সৃষ্টিকর্তা আর অন্তরে শয়তানি চলতে পারে না। 

করোনাভাইরাস সংক্রমনের প্রাদুর্ভাবে সৌদী সরকার মসজিদে গণজমায়েত করে নামাজ পড়া আপাতত বন্ধ করে দিয়েছে। কাবা চত্তরসহ মহানবীর রওজাশরীফে দর্শনার্থীদেরকে যেতে দেওয়া হচ্ছে না। হজ্জ পালন থেকে বিরত রাখছে। সৌদী আরবে কারফিউ জারি করেছে। করোনা প্রতিরোধে পাকিস্তান সরকারের জারিকৃত নির্দেশ অমান্য করায় আযান দিয়ে মুছুল্লী জমায়েত করায় আঠরোজনকে পুলিশ আটক করেছে। সারা বিশ্বে মসজিদ মন্দির গির্জা সহ সকল উপাসনালয়ে গণজমায়েত বন্ধ ঘোষনা করা হয়েছে। ৬ এপ্রিল সোমবার বাংলাদেশ সরকারের ধর্ম মন্ত্রণালয় মসজিদে ৫ জনের বেশী একত্রে নামাজ আদায় করতে পারবে না বলে নির্দেশ জারি করেছে। করোনাভাইরাস মানুষ থেকে মানুষকে আলাদা করছে। পৃথিবীর কোনো শক্তি করোনাভাইরাসকে দমাতে পারছে না। চিকিৎসা বিজ্ঞান থেকে শুরু করে ধর্মীয় কর্মকান্ড দোয়া খায়ের এই প্রাণঘাতী সংক্রমনকে হটাতে পারছে না। এ কিসের আলামত। পৃথিবীর মানুষকে বুঝতে হবে। নিজেদের কর্মকান্ডের অনুশোচনা করতে হবে। পরিস্থিতি অনুধাবন করতে হবে। যুগে যুগে মানব জাতিকে হেদায়েতের জন্য নবী রসূল এসেছেন। বর্তমানেও দুনিয়াতে মানুষ অতি ভোগাসক্তিতে উন্মাদ হয়ে পড়েছে। আর এ সব দেখে বলা যেতে পারে অনেক হয়েছে আর নয়। প্রত্যেককে নিজ থেকে ভালো হয়ে যেতে হবে। ধর্মের নামে ধোঁকাবাজি গলাবাজি ছাড়তে হবে। পবিত্র স্থানে অপবিত্র কাজ চলতে পারে না। অন্যায় কাজ থেকে নিজেকে দূরে রাখতে হবে। সৎস্বভাব ধারণ করতে হবে। অন্যের চেয়ে নিজেকে আগে ঠিক করতে হবে। কোন অদৃশ্য শক্তি তার মহা পরিকল্পনায় এই খেলা খেলছে তা এখনো অজানা। বিশ্বের তাবৎ পরাশক্তি ধরাশায়ী হয়ে পড়েছে। কবে এর থেকে মুক্তি মিলবে সে নিশ্চিয়তা কেউ দিতে পারছে না। পুরনো ধ্যান ধারণায় আর চলা যাবে না। সুবিধাভোগীর জায়গা সংকীর্ণ হয়ে আসবে। সে যে-ই হউক। কার উপর কে খবরদারি করবে সময়েই বলে দিবে। এই পৃথিবী তার পৃষ্ঠে আঠারো হাজার মাখ্লুকাতকে ধারণ করে রেখেছে শ্রেষ্ঠ মানব জাতির স্বার্থে। এটা মানবজাতিকে বুঝতে হবে। এর মর্যাদা রক্ষা করতে হবে। ভাব দেখলে মনে হয় করোনাভাইরাস এমনি এমনি আসেনি। আরো কিছুদিন গেলে ধীরে ধীরে স্পষ্ট হবে। এর রহস্য মানুষই গবেষণা করে বের করবে। 

করোনাভাইরাসের আক্রমন থেকে দেশের মানুষকে নিরাপদে রাখতে বিশেষ করে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা অতন্দ্র প্রহরীর ভুমিকায় সজাগ থেকে সাধ্যমত চেষ্টা করে যাচ্ছেন। এর আগের লেখায় বলেছি উন্নয়নশীল রাষ্ট্র হিসেবে এতো বড় কঠিন সংকটের মোকাবেলা করার সামর্থ আমাদের সরকারের কতটুকু আছে তা আমাদেরকেই ভাবতে হবে। সবার সম্মিলিত সহযোগিতা অত্যন্ত জরুরী। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর দৃঢ় মনোবল আমাদেরকে শক্তি দেয় সাহস যোগায়। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশ মান্য করা দেশের প্রত্যেকটি নাগরিকের দায়িত্ব ও কর্তব্য। নিজের অবহেলার করণে অন্যের ক্ষতি হতে পারে এমনটা মাথায় রাখতে হবে। করোনাভাইরাস সংক্রমন প্রতিরোধে সকল মানুষকে সাবান দিয়ে ভালোভাবে দুহাত পরিস্কার রাখতে হাচি কাশি কফ যেখানে সেখানে না ফেলতে মুখাবরণ ব্যবহার করাসহ একজন থেকে আর একজনকে দূরত্ব বজায় রাখতে এবং আরো আরো যে সব বিধিনিষেধ আছে সেগুলো যথাযথভাবে পালন করতে জোর প্রচার চালাচ্ছে। বাংলাদেশ অত্যন্ত ঘনবসতিপূর্ণ একটি জনবহুল দেশ। 

এ দেশের মানুষের মুখে হাসি ফুটাবার জন্য জননেত্রী শেখ হাসিনা এই ভারি বয়সেও অক্লান্ত পরিশ্রম করে যাচ্ছেন। তাঁর হৃদয়জুড়ে মানবতা। মানবতার মাতা হিসেবে মানবিক কাজে তিনি কখনো ভুল করেন না। যে রোহিঙ্গাদেরকে মিয়ানমার সরকার নিধন করতে চেয়েছে মমতাময়ী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাঁর আপন মহিমায় উদ্ভাষিত হয়ে তাদেরকে আশ্রয় দিয়েছেন। সীমিত সম্পদের দেশ হলেও তিনি ঘোষণা দিয়েছেন ‘প্লেটের ভাত দরকার হলে ভাগ করে খাবো তবুও রোহিঙ্গাদেরকে অমানবিক ভাবে তাড়িয়ে দেবো না।’ তাঁর এই মানবতার দৃষ্টান্ত বিশ্বকে অবাক করেছে। তিনি বিশ্বে স্বীকৃতি পেয়েছেন মানবতার মাতা (গড়ঃযবৎ ড়ভ ঐঁসরহরঃু) হিসেবে। তাঁকে নিয়ে আমরা গর্ববোধ করি। অনেক ভালোবাসি। আল্লাহ্র পরে তিনি আমাদের ভরসা। তিনি জাতির কল্যাণময়ী ভাগ্যল²ী মহীয়সী নারী। গত ২৫ মার্চ দেশের বিরোধী দলের বিএনপির চেয়ারপার্শন বেগম খালেদা জিয়াকে মানবতার দৃষ্টিকোন থেকে বিচার বিবেচনায় কারাদন্ড স্থগিত রেখে মুক্তি দিয়ে এক বিরল দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন। কারামুক্তির কয়েক মুহুর্ত আগেও বেগম খালেদা জিয়ার ধারণা ছিলো না যে, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার পক্ষ থেকে তার জন্য এক মানবিক উপহার অপেক্ষা করছে। দেশরতœ শেখ হাসিনার এই উদারতা ইতিহাস হয়ে থাকবে। প্রধানমন্ত্রী তাঁর নিজ জ্ঞান থেকে অনেক ভালো কাজ করে থাকেন। তবে কারো অভিনন্দন পাওয়ার জন্য তিনি অপেক্ষায় থাকেন না। তিনি সঠিক কাজটি সঠিক সময়েই করে থাকেন বলে খ্যাতি আছে। বঙ্গবন্ধু মানে যেমন বাংলাদেশ তেমনি শেখ হাসিনা মানে উন্নয়নের বাংলাদেশ। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর রাজনৈতিক আর একটি উৎকৃষ্টতা হলো তিনি কারো সাথে বিদ্বেষ চান না। বিশ্বের সকল রাষ্টের সাথে বন্ধুসুলভ মনোভাব আর ভ্রাতৃপ্রতিম সম্পর্ক স্থাপনে তিনি আগ্রহী। তিনি দৃঢ় মনোবল আর দীর্ঘ রাজনৈতিক বিচক্ষণতার পরিচয় দিয়ে অত্যন্ত ধৈর্যশীলতার সাথে রাষ্ট্র পরিচালনায় সুখ্যাতি অর্জন করেছেন। শেখ হাসিনা সরকারের উন্নয়নমূলক কাজে বাংলাদেশ বিশ্বের চোখে উন্নয়নের রোল মডেল পরিচিতি পেয়েছে। জোর করে অর্জন করা তাঁর পছন্দ নয়। বরং ত্যাগে শান্তি স্থাপন করা যায় বলে তিনি বিশ্বাস করেন।

পরিশেষে করোনাভাইরাসের নিকট মিনতি জানিয়ে বলতে চাই পৃথিবীর সকল মানুষ গৃহবন্দী হয়ে পড়েছে। কোথাও কোলাহল নেই। কেবল নিস্তব্ধতা আর শুনসান অবস্থা বিরাজ করছে সারা বিশ্বময়। শোকের নিশ্বাসে বাতাস ভারি হচ্ছে দিনের পর দিন। ধ্বংস এবং মানুষ হত্যার মধ্যে কোন স্বার্থকতা নেই। বরং বাঁচিয়ে রাখার মধ্যেই গৌরব। করোনার এই প্রাণঘাতী আক্রমণ থেকে বেঁচে গেলে সকলকে শুদ্ধি জীবন নিয়ে বাঁচতে হবে। ছিঁড়াছিঁড়ি হানাহানি করা যাবে না। একে অপরের তরে এই মানষিকতা নিয়ে বাঁচতে হবে। সৃষ্টির রহস্য অনুধাবন করতে হবে। অন্যের সাহায্য ছাড়া যেমন বাঁচা যায় না তেমনি অন্যের প্রতি অবহেলা ঘৃণা বিদ্বেষ পরিহার করতে হবে। ঠগবাজি কুটিলতা ত্যাগ করতে হবে। নিজেদেরকে মারামারি হানাহানি থেকে বিরত থাকতে হবে। মনে রাখতে হবে এর ব্যত্যয় ঘটলে করোনাভাইরস তার আস্ফালন দেখিয়ে বলবে তোমরা নিজেরাই তো মানুষ হত্যা থেকে বিরত থাকছো না। আমি তো আসলাম সবেমাত্র। করোনার মহামারিতে মানবজাতি অনেক বড় ধাক্কা খেয়েছে। এতো বড় ধাক্কা খেয়েও যদি পরিবর্তন না হয় তবে বুঝতে হবে ধ্বংস অনিবার্য। যা থেকে উত্তরণ লাভ করা অনেক কঠিন হবে। সকল মতপার্থক্য ভেদাবেদ ভুলে বাসযোগ্য সুন্দর পৃথিবী গড়তে হবে সম্মিলিতভাবে এই মানুষদেরকেই। করোনাভাইরাস চলে গেলে আগের মত যেভাবে সেভাবে চলা যাবে না। সব ঠিকঠাক করতে হবে। ঢেলে সাজাতে হবে নিয়ম শৃঙ্খলার প্রতিটি ধাপ। মেনে চলতে হবে মানব কল্যাণের সকল বিধিবিধান। মনে রাখতে হবে এই প্রাণঘাতী ভাইরাস চলে গেলেও অতি দূরে যাবে না। ছোট বড় সকল মানুষের আচরণবিধি ঠিক থাকলে এই শক্তিশালী ভাইরাস ক্ষান্ত থাকবে। অন্যথায় কখন কোন ভিন্ন রূপে আবির্ভূত হবে তা বলা মুশকিল। করোনাভাইরাসের কঠোরতা আছে ঠিক কিন্তু দয়া থাকাও অস্বাভাবিক নয়। যুগে যুগে অনেক মহামারি দুর্যোগ পৃথিবীতে এসে তান্ডব ঘটিয়ে ক্ষমতার জানান দিয়ে আবার চলে গেছে। আশা করি করোনাভাইরাসের ক্ষেত্রেও এর ব্যতিক্রম হবে না। করোনা কিংবা এর জন্মদাতা প্রভু অনেক শক্তিমান। অনেক ক্ষমতাধর। কিন্তু আমরা সাধারণ মানুষ বড়ই অসহায়। সবার অভিব্যক্তিতে ফুটে উঠেছে করোনা ‘আমি ছোট- আমাকে মেরো না’। পৃথিবীর প্রত্যেকটি মানুষকে তোমার আক্রমণ থেকে নিস্কৃতি দাও। একই কথা পুনরাবৃত্তি করছি- মানুষ নিধন করার  মধ্যে কোন স্বার্থকতা নেই। মানুষকে বাঁচার অধিকার থেকে বঞ্চিত করো না। 

সর্বশেষ মহান সৃষ্টিকর্তা পরম করুনাময় আল্লাহ্র নিকট অঝোর কান্নায় দু-চোখের পানি ফেলে গভীর অনুভূতি অনুশোচনা থেকে প্রার্থনা জানাই সারা বিশ্বে যে ক্ষতি হয়ে গেছে তার পরিধি আর যেনো না বাড়ে। তিনি তাঁর রহ্মতের ছায়াতলে সকল মানুষকে আশ্রয় দান করুন। সকলকে নিরাপদে রাখুন। প্রাণঘাতী করোনাভাইরাস নামধারী সংক্রমনকে পৃথিবী থেকে চিরতরে দূরে সরিয়ে নিয়ে বিপদ মুক্ত করুন। বাংলাদেশের জনগণকে এ পর্যন্ত যতটা বিপদমুক্ত রেখেছেন তার জন্য জানাই লাখো শুকরিয়া। করোনাভাইরাসের কথা বলতে গিয়ে এতো কিছু জুড়ে বলার অর্থ আত্মশুদ্ধি অনুধাবন ও অনুশোচনা সবার মধ্যে জেগে উঠুক। মানবতা আর কল্যানের উদার চিত্তে জাগ্রত হউক বিশ্ব বিবেক। সচেতন হউক প্রত্যেকটি মানুষ। অন্যথায় যে-সেই। খোলা চোখ এমনটাই বলছে।

 

লেখক- কবি, প্রবন্ধকার ও কলামিষ্ট।


এগিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ কম্পিউটার কাউন্সিলের
সারাবিশ্বে যখন প্রাণঘাতী করোনাভাইরাস সংক্রমণ বৃদ্ধি পাচ্ছে ঠিক সে সময়
বিস্তারিত
এনাম রাজুর গুচ্ছ কবিতা
তুমি ও তোমার পৃথিবী যদি মিথ্যা পথের বাঁধা হয়ে চোখ রাঙায়
বিস্তারিত
সাইয়্যিদ মঞ্জুর দুইটি কবিতা
ঘরে থাকো ঘরে ঘরে আছি- ঘরে ঘরে থাকো- ঘরে। ঘরে থাকি- যদি
বিস্তারিত
আদ্যনাথ ঘোষের একগুচ্ছ কবিতা
রোদ আর বালিকা সকালের ঢালা রোদ অবিরত খেলে দোল ঝিলিমিলি মধুময়
বিস্তারিত
ঈদে চিত্রার অর্গানিক সেমাই
ঈদ উপলক্ষে চিত্রা কৃষি বাজার এনেছে ভিন্ন স্বাদের হাতেভাজা লাচ্ছা
বিস্তারিত
রঙ বাংলাদেশে অনলাইন কেনাকাটায় ৫০
রমজানের ঈদ সমাগত। করোনার এ সময়ে সেভাবে না হলেও একমাস
বিস্তারিত