নভেল করোনা ভাইরাস সমগ্র বিশ্বে একটি আলোচিত নাম। এ ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুর মিছিল প্রতিনিয়তই দীর্ঘায়িত হচ্ছে। গত বছরের ৩১ ডিসেম্বর চীনের উহানে অঃুঢ়রপধষ চহবঁসড়হরধ আক্রান্ত একজন রোগী শনাক্ত হয়। ৭ জানুয়ারি বিশ্বের সর্বপ্রথম কোভিড-১৯ রোগী শনাক্ত হয় চীনের বন্দরনগরী উহানে। বাংলাদেশে প্রথম শনাক্ত হয় ৮ মার্চ।বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা কোভিড-১৯ রোগকে বিশ্বে মহামারীরূপে ঘোষণা দেয় ১১ মার্চ।
বাংলাদেশ তথা বিশ্বের অনেক দেশেই এ রোগ সংক্রমণ রোধে চলছে নানাবিধ প্রক্রিয়া। স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা, সামাজিক দূরত্ব, সাধারণ ছুটি, লকডাউনের মাধ্যমে চলছে এ দেশে রোগ সংক্রম রোধের চেষ্টা। কিন্তু প্রতিদিনই বাড়ছে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা। বিশ্বের অন্য দেশের মতো
বাংলাদেশের স্বাস্থ্য ব্যবস্থার ওপর পড়ছে বিরূপ প্রতিক্রিয়া। অন্যান্য রোগে আক্রান্ত রোগীরা তার স্বাভাবিক চিকিৎসা পেতে অসুবিধার সম্মুখীন হচ্ছে।
কোভিড ১৯-এ আক্রান্ত রোগীর ফুসফুসে প্রদাহ ব্যতীত শরীরের অন্যান্য অঙ্গপ্রতঙ্গ যেমন- কিডনি, হার্টের ওপর পরে মারাত্মক প্রভাব। এ রোগে আক্রান্ত রোগীর মধ্যে দেখা দিতে পারে কিডনি নষ্ট হওয়ার উপসর্গ যাদের ক্ষেত্রে ডায়ালাইসিস পর্যন্ত দরকার হতে পারে। কিডনি নষ্ট হওয়ার কয়েকটি কারণ উল্লেখযোগ্য-
কিডনি টিস্যুর ওপর সরাসরি ভাইরাসটির প্রভাব, কিডনিতে অক্সিজেনের সাপ্লাই কমে গেলে (ঐুঢ়ড়ীরধ), বডির ইমুন সিস্টেমের ওপর অতিরিক্ত প্রভাব ফেললে অথবা কোভিড ১৯-এর কারণে রক্তনালিতে অস্বাভাবিকভাবে রক্ত জমাট বাঁধে।
উচ্চ রক্তচাপ কিডনির স্বাভাবিক কার্যক্রম হ্রাসের একটি অন্যতম কারণ, যা পরবর্তীতে কিডনিকে অকার্যকর করে দেয়। উচ্চ রক্তচাপের রোগীরা করোনায় আক্রান্ত হলে কি ওষুধ সেবন করবেন তা নিয়ে আছে বিভিন্ন যুক্তি। করোনায় আক্রান্ত রোগী যারা উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে পূর্ব হতেই অঈঊ রহযরনরঃড়ৎং, অহমরড়ঃবহংরহ জবপবঢ়ঃড়ৎ ইষড়পশবৎং(অজইঝ) গ্রুপের ওষুধ নিয়মিত সেবন করছেন, তাদের ক্ষেত্রে দুই ধরনের মত আছে। কারও মতে, এ ওষুধ সেবনে করোনা ইনফেকশনের প্রভাব আরও তীব্রতর হতে পারে এবং অন্যরা বলছেন, বরং এ গ্রুপের ওষুধ সেবনে করোনার প্রভাবে ফুসফুসের প্রদাহ কিংবা নষ্ট হওয়ার প্রক্রিয়া প্রতিহত হয়। অধিকাংশ বিশেষজ্ঞের মত হলো, উচ্চ রক্তচাপের রোগীরা করোনায় আক্রান্ত হলে তারা পূর্ব নির্ধারিত ওষুধই সেবন করবেন। কিন্তু ব্যথার ওষুধ ঘঝঅওউঝ যেমন নেপরোক্সেন, ইবুপ্রোফেন এরিয়ে চলবেন। কারণ এ ধরনের ব্যথার ওষুধ কিডনির কার্যকারিতা আরও নষ্ট করতে পারে।
যেসব রোগী ইউরোলজিক্যাল কারণে প্রসাবের নানাবিধ সমস্যা, কিডনির জায়গায় ব্যথা, কিডনি বা কিডনির নালি বা প্রসাবের রাস্তায় পাথর বা অন্য কোনো সমস্যার জন্য বর্তমান পরিস্থিতিতে ডাক্তারের কাছে যেতে পারছেন না তারা পূর্বের দেওয়া স্বাস্থ্য বাতায়ন মেনে চলবেন। প্রয়োজনে আপনার চিকিৎসকের সাথে টেলি হেলথ পরামর্শ নিতে পারেন। জরুরি প্রয়োজন যেমন প্রসাবের সাথে রক্ত যাওয়া, প্রসাব বন্ধ হওয়া, কিডনি কিংবা প্রসাবের রাস্তায়
টিউমারের রোগী অথবা অপারেশনপরবর্তী নিয়মিত ফলোআপের ক্ষেত্রে স্বাস্থ্যবিধি মেনে ইউরোলজিশ্টের সাথে
অথবা ইউরোলজি বিভাগ আছে এমন হাসপাতালে যোগাযোগ করুন। কিডনিসংক্রান্ত ব্যথার জন্য কোনো ধরনের ওষুধ ডাক্তারের পরামর্শ ব্যতীত খাবেন না।
যারা দীর্ঘদিন যাবত কিডনি সমস্যায় ভুগছেন অতিপ্রয়োজন ব্যতীত বাসার বাইরে যাবেন না, সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখুন। ডায়েবেটিকস, উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখুন। খাবারের তালিকা মেনে চলুন, ফলমূল পরিহার করুন, আমিষজাতীয় খাবার কম খাবেন। দৈনিক ১.২-১.৫ লিটার পানি পান করুন। যারা সপ্তাহে তিনটি ডায়ালাইসিস পান উদ্ভূত পরিস্থিতির কারণে নেফরোলজিশ্টের পরামর্শে কমিয়ে এনে দুটি করা যেতে পারে, পানি কম খেতে হবে এবং যাদের এখন পর্যন্ত কিছু প্রসাব হয় রক্তচাপ
ঠিক থাকলে তাদের ক্ষেত্রে ডায়ুরেটিকস প্রয়োগ করা যেতে পারে।
তবে যে সকল রোগীর জ্বর, কাশি, শ্বাসকষ্ট বা করোনার রোগীর সংস্পর্শে আসার ইতিহাস রয়েছে প্রথমে তাদের ফিভার ক্লিনিকে যোগাযোগ করতে হবে। কোভিড-১৯ পরীক্ষা পজিটিভ হলে চিকিৎসার জন্য কোভিড ডেডিকেটেড হাসপাতালে যোগাযোগ করবেন। পরীক্ষার ফল নেগেটিভ হলে রিপোর্টসহকারে স্বাস্থ্যবিধি মেনে পূর্ব নির্ধারিত তারিখ নিশ্চিত করে ডায়ালাইসিস সেন্টারে যাবেন।
মনে রাখবেন, আপনার একটু অসাবধানতা, করোনার উপসর্গ এড়িয়ে যাওয়া শুধু আপনারই না আপনার পরিবার, ডাক্তার, স্বাস্থ্যসেবায় নিয়োজিত অন্যদের ক্ষেত্রে জীবনের ঝুঁকির কারণ হতে পারে।
লেখক : এমবিবিএস, এমএস (ইউরোলজি), এফএসিএস
এসআইইউ ফেলোশিপপ্রাপ্ত কনসালটেন্ট; পপুলার ডায়াগনস্টিক, শান্তিনগর।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়