ভ্যাপসা গরমে ঠান্ডা-কাশিতে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বেড়ে যায়। নাক দিয়ে ক্রমাগত পানি পড়া, নাক বন্ধ, হাঁচি-কাশি, মাথাব্যথা, হালকা জ্বর, কাঁপুনিই এ রোগের প্রধান লক্ষণ। আবহাওয়ার আকস্মিক ও দ্রুত পরিবর্তন, গরমে ঘাম ও রোদের তাপ, সব কিছু মিলিয়ে প্রকোপটা এ সময় বেশি হয়। যাদের হাঁপানি, ফুসফুসের সমস্যা কিংবা সামান্য সর্দি-কাশিজনিত অ্যালার্জিতে ভোগার প্রবণতা রয়েছে, তারা আগেভাগে সাবধান না হলে ঠান্ডারোগজনিত জটিলতায় আক্রান্ত হতে পারেন। ভাইরাসজনিত জ্বরেও অনেকে এ সময় ভুগতে পারেন।
তাপমাত্রার তারতম্যের কারণে ভাইরাসের যেমন দ্রুত বংশবৃদ্ধি পায়, তেমনি দ্রুত ছড়িয়ে পড়তে পারে। ভাইরাসের জীবাণু হাঁচি বা কাশির মাধ্যমে নাক-মুখ থেকে অন্তত ছয় ফুট দূরত্ব পর্যন্ত ছড়াতে পারে। আর বাতাসে বেঁচে থাকতে পারে বেশ কয়েক ঘণ্টা। এ ছাড়া হাত দিয়ে নাক মোছা বা নাকে-মুখে হাত দেওয়ার পর সেই হাত দিয়ে অন্যকে স্পর্শ করা, স্কুল বা কর্মক্ষেত্রে সৌজন্য বিনিময় বা পাশাপাশি অবস্থানের কারণেও রোগ সংক্রমিত হতে পারে। রোগ ছড়াতে পারে অফিস বা দোকানপাটের দরজার হাতল, টেবিলের কোণ, রিকশার হুড, গাড়ির হ্যান্ডেল, টেলিফোন ও ব্যবহৃত ব্যক্তিগত জিনিসপত্র থেকেও।
তবে আর দশটা ভাইরাসজনিত রোগের মতো এ রোগ তেমন মারাত্মক কিছু নয়। রোগমুক্তি ঘটে সাধারণত কোনো চিকিৎসা ছাড়াই। জ্বরের প্রকোপ থেকে রক্ষা পেতে আর শারীরিক অবসন্নতা কাটাতে কিছু চিকিৎসার প্রয়োজন পড়ে। জ্বর ১০০ ডিগ্রি পেরোলেই প্যারাসিটামল খেতে হবে। চার-পাঁচ দিনেও জ্বর না কমলে ডাক্তারের পরামর্শে প্রয়োজনে অ্যান্টিবায়োটিক সেবন করতে হবে।
আর দুসপ্তাহ বা তারও বেশি সময় সর্দি-কাশি না সারলে ধরে নিতে হবে ফুসফুস আক্রান্ত হয়েছে ভালোমতোই। বিশেষ করে শিশু ও বয়স্কদের ক্ষেত্রে। তাদের ক্ষেত্রে সাধারণ সর্দি-কাশিই পরে নিউমোনিয়ায় রূপ নিতে পারে। তাই শিশু ও বয়স্কদের ক্ষেত্রে অযথা ঝুঁকি নেওয়ার দরকার নেই। একবার ডাক্তার দেখিয়ে নেওয়া ভালো।
জ্বর, সর্দি-কাশি যা-ই হোক, পানি পান করুন বেশি বেশি। জুস পান করুন, বিশ্রাম নিন। ভালো ঘুম দিন। তাড়াতাড়ি সেরে উঠবেন। গলাব্যথা বা অস্বস্তি ভাব কাটাতে আধা-কাপ কুসুম গরম পানিতে আধা-চামচ লবণ মিশিয়ে গার্গল করতে পারেন। দোকানির পরামর্শে কফ সিরাপ বা অ্যান্টিবায়োটিক সেবন করবেন না। এতে অনেক সময় হিতে বিপরীত হতে পারে। আক্রান্ত হলে নিজের ব্যবহার্য বস্তু, যেমন- তোয়ালে, রুমাল, মোবাইল কাউকে ধরতে দেবেন না। হাঁচি-কাশির সময় নাক-মুখ টিস্যু দিয়ে ঢাকুন, নির্দিষ্ট স্থানে ফেলে দিন, সাবান দিয়ে হাত ধুয়ে নিন।
লেখক : সহযোগী অধ্যাপক
জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউট ও হাসপাতাল (এনআইসিভিডি), শেরেবাংলানগর, ঢাকা