শয্যার পরে রাখলে বালিশ দেখায় যেমন
মাটির ঢিবি তেমনি একটি দেখা যায়,
যার ওপরে লতাপুষ্প মাথা নোয়ায়
আমরা বসি তেমন অতি মিলন গায়।
আমাদের হস্তগুলো ধরাধরি বাঁধনআঁটা
যেথা হতে উৎসারিত সুগন্ধি শোভাজ্যোতি,
নীরবতা বহন করে চাহনি বাঁকা আঁখিগুলো
প্রতিফলন পড়ে তখন একে অন্যের প্রতি।
আবেগ আঁটা হস্তগুলো জানায় তবে শেষে
দ্বিধাশূন্য নিকটতম আমরা দু’জন সুখে,
যাহা কিছু পরিব্যপ্ত ছড়াই চারিদিকে
ঘনিভূত ভালোবাসা প্রেমিকদ্বয়ের চোখে।
যেমন সমকক্ষ সৈন্যদ্বয় জয় নিয়ে খেলে
ভাগ্য সেখানে দেখা দেয় ভারসাম্য হয়ে,
তেমনি আমাদের আত্মাদ্বয় দেহ হতে পালিয়ে
তাঁর-আমার মধ্যে রাজে শান্তি আনে বয়ে।
পরস্পরে কথা বলে আমাদের আত্মাদ্বয়
তখন ভাবশূন্য মূর্তির মতো পড়ে থাকি,
সারাদিন একইভাবে দেখি তাদেরÑ
নড়াচড়া কথাবলা সবি যেন থাকে বাকি।
যদি কেহ ভালোবাসায় হয় উন্নতÑ
তবে সে আত্মার কথা বুঝতে পারে পরিষ্কার,
আত্মিক ভালোবাসা জন্ম নেবে তখন মনে
যেমন আত্মা পৌঁছে যাবে নিরাকার।
আমাদের আত্মার কথা না বোঝে যদি সে
কারণ উভয় আত্মার বচন বিষয় একই,
সম্ভাবত আত্মাদ্বয়ে এক পদার্থের নব শোধন
খাঁটি তখন হয়ে যাবে দূরে যাবে মেকি।
আনন্দের আতিশয্যে যখন আত্মা দু’টি জাগে
ভালোবাসার মূলমন্ত্র তখন আমরা পাই,
সে সাথেও উৎস ইহার জানতে পারি শেষে,
দেখি তাতে এক বিন্দু যৌন উদ্বেগ নাই।
একজাতীয় উপাদানে আত্মাসবে তৈরি
ফলে শত চেষ্টায় পায় না কিছু বদ্ধদ্বারে,
আনন্দের ভালোবাসা যখন মিশায় তাদের এক
তখন তারা বাস করে একে অন্যের অন্ধকারে।
স্থানান্তরিত হয় যদি একটি পত্রপুষ্পের গাছ
পূর্বে যদি অযতেœ এটা কাটায় কিছুদিন,
বেড়ে উঠবে ত্বরা শক্তি, রঙ, আকারে
দূর করি বাধা-বিপদ সকল প্রকার দীন।
এমনি তবে ভালোবাসা মিলায় যবে দু’টি আত্মা
নতুন জীবনের পরশ পায় তারা তখন,
এই মিলন-আত্মা এক-জীবন যদি কোনো পায় বাধা
পরাজিত করে তারে না থেমে মুহূর্তক্ষণ।
আমরা এখন নতুন জন্মে, নতুন আত্মায়,
ফলে আমরা জানতে পারি কোন উপাদানে তৈরি,
কিসে আমরা উঠছি বেড়ে, অনুধাবন ঘটছে কিসে,
কারণ আত্মাগুলো মুক্ত এখন পরিবর্তন বৈরী।
কিন্তু, হায়! এতদিন, এতোদূর Ñ
শরীর বিষয়ে আমরা কেন অজ্ঞ হই?
তারা হয় আমাদের, যদিও আমরা তাদের নই,
আমরা এখন অশরীরী তাদের মাঝে বেঁচে রই।
ঋণে আমরা জর্জরিত তাদের নিকটে
মিলন তারা এনেছিল একপ্রাণে আমাদেরকে,
জ্ঞান-ইন্দ্রিয় দিয়েছিল সব স্বার্থ ত্যাজি
অপবিত্র নয় তারা, সংমিশ্রণে জানি তাদেরকে।
গ্রহ-তারার প্রভাব মানব ’পরে হানে আঘাত
যেমন এসব নেমে আসে শূন্য পথ বেয়ে,
তেমনি প্রবেশ একটা আত্মার অপরটার মাঝে
বাহন শুধু দেহটি-তারই মধ্য দিয়ে।
জীবনশক্তি জন্ম নেয় রক্ত হতে Ñ
যন্ত্র হিসেবে কাজ করে যায় আত্মাদ্বয়ের,
পূর্ণ মানুষ জন্ম নেয় সেই মুহূর্তে
যেমনি তারা গিরা আঁটে দুই পদার্থের।
নেমে আসে দেহ হ’তে প্রেমিকদ্বয়ের আত্মা
জীবনশক্তি উপলব্ধি পাওয়ার নেশায়,
দৈবক্রমে এসবগুলো না পায় শেষে
সারাজনম ঝুলবে তখন নিষ্ফল আশায়।
ফিরে যেতে দাও শরীরে ত্বরা আমাদের
তা’হলে দুর্বল লোকে ভালোবাসা পাবে,
ভালোবাসার রহস্য যা কিছু আত্মায়
পুস্তক-সম দেহ দিয়ে সব প্রকাশ হবে।
যদি কোনো প্রেমিকদ্বয়, যেমন আমরা উভয়ে
দৈবাৎ শুনে থাকে এই আলোচনা জীবনে,
একবিন্দু পরিবর্তন দেখতে পাবে সেথা,
আত্মিক মিলন ’পর শরীর মাঝে গমনে।