কবি ও কথাসাহিত্যিক আফিফ জাহাঙ্গীর আলির জন্মদিন পহেলা জানুয়ারি। ১৯৭৮ সালে ময়মনসিংহের ফুলপুর উপজেলার কংশ নদের পাড়ে তার জন্ম। আর এ কারণেই হয়তো নৈসর্গ, পাহাড় ও নদী তাকে খুব টানে। ছাত্র অবস্থায় সাংবাদিকতার সঙ্গে যুক্ত হন। আজও আছেন এর সঙ্গে। তবে সাংবাদিকতার পাশাপাশি লেখালেখিটাও করছেন নিয়মিত। মূলত তিনি কবিতার মানুষ। প্রকৃতির নিবিড় টান আর মূর্তমান বর্ণবাদ তার কবিতায় অনুপম শৈল্পিকতায় উঠে আসে। বলা যায়, প্রকৃতির পালাবদল তার কবিতায় ভাস্বর হয়ে ওঠে। এর সঙ্গে আরও উঠে আসে প্রেম-ভালোবাসা, সমাজ-সংস্কৃতি এবং সমসাময়িক বিষয়।
তিনি তার ‘লালচোখে’ কবিতায় লিখেছেনÑ
বান ডাকে ভরা যৌবনা কংশ নদী
আকাশ আর জলে নিবিড় মিতালি।
স্ফীত প্রবাহে রুপা বর্ণের মাছ লাফায় জলের ওপর
জলতরঙ্গ উৎসবে দিগদ্বিক ছুটে গন্তব্যহীন গন্তব্যের দিকে।
পাখি খাদ্যান্বেষণে জলের ওপর কমান্ডো প্রহরীর মহড়া দেয়
যেখানে জল নড়ে শালিক-ফিঙে সেখানেই আহার সন্ধান করে।
ক্ষুধার্ত মাছরাঙা ডালে বসে শিকারের অপেক্ষায়
চঞ্চু বিদ্ধ করে আটকে দেয় বিকেল।
শেষ বিকেলের সোনামাখা রোদের ছানি আবারিত জলরাশিতে রাশি রাশি
সোনাখচিত ঝলমলে পর্দা দিগন্ত বিস্তৃত জল ছায়া
কবুতর ছানার মতো কাঁপা তির তির নৈসর্গিক অপরূপ ঢেউ ছলছল।
মহাশোল মাছের লালচোখে থেমে যায় স্রোত;
কী অপরূপ জলে সোনালি বিকেলের রূপ।
ক্রমশ বিকেলের সোনা রোদ পোড়ে জলে কফি রঙ,
অতঃপর একমুঠো বর্ণীয় সন্ধ্যের আমেজ পকেটে নিয়ে ঘরে ফেরা।
তিনি তার ‘অবধারিত’ কবিতায় লিখেছেনÑ
চোখ বন্ধ, ভাবনার চোখে জীবন এক মৃত্যুঞ্জয়ী খোয়াব,
চোখ মেলে নিশ্চিত হলাম জীবন বরফখণ্ড, গলে যাওয়াই যার ধর্ম?
যাপিত জীবনের খাতায় ফিরিস্তি লেখা নেই কোনো পৃষ্ঠায়, শূন্য খাতায় বেড়েই চলেছে পৃষ্ঠা নম্বর, নামতা নেই জানা, আহা! জীবন।
‘পয়দা থেকে একটানা জীবন চলছে ফুসফুস কলে’, একদা বাতাস বন্ধ হয়ে এ কল থেমে যাবে নেই যার কোনো নির্দিষ্ট সীমা, তারিখ, সময়, অবস্থানস্থল।
নশ্বর জীবন বিনে পয়সায় হাওয়ার তেল পুড়িয়ে ক্রমাগত এগিয়ে চলছে নিজ আলয়ে; আপন জগতের বাইরে, যেখানে জীবনের শেষ ঠিকানা অবধারিতÑ সেখানের সওদা করতে ভুলে গিয়েছি।
মোস্তাফিজুল হক